বাটেক্সপো-২০১২’ সমাপনী অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে হরতালমুক্ত দেশ দেখতে চেয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আর খালেদা জিয়া ব্যবসায়ীদের বললেন, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার চলমান আন্দোলনে অবদান রাখতে সোচ্চার হতে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিএমইএ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
খালেদা জিয়া বলেন, এখন ক্ষমতাসীনরা একদলীয় মনোভাব নিয়ে গণতন্ত্রের নাম-নিশানা মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আইনের শাসন নেই, বিচারব্যবস্থায় নৈরাজ্য। প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট করা হয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশকে দলীয় স্বার্থে ও ভিন্নমত দমনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইউনিপেটুইউ, হল-মার্ক, ডেসটিনি ও শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। বিদ্যুত্ ও গ্যাস সরবরাহ না থাকায় উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে।
সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘দেশের এই অবস্থায় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নিশ্চুপ বসে থাকলে চলবে না। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলা সময়ের দাবি।’ তিনি বলেন, সরকারে থাকতে ও বিরোধী দলে থেকে এই শিল্পের জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন। এখন জাতির সন্ধিক্ষণে ব্যবসায়ীদের কিছু দেওয়ার আছে। এখন ব্যবসায়ীদের পালা। তাঁদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আন্দোলনে অবদান রাখতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, পোশাকশিল্প তিনটি দিক থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই শিল্প সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, বেশি সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং শিল্পের বেশির ভাগ কর্মীই নারী। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যন্ত্র নয়, যন্ত্রের পেছনের মানুষই এই শিল্পের প্রাণশক্তি। তাঁদের নিরাপত্তা ও কাজের উপযোগী পরিবেশকে গুরুত্ব না দিলে এই শিল্পে ইনসাফ হবে না। বে-ইনসাফের ওপর কোনো কিছুই টেকসই হতে পারে না।’ তিনি এই শিল্পের জন্য কমপ্লায়েন্সের যেসব শর্ত আছে, তা বাস্তবায়নের জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শ্রমিকদের জন্য আরও আন্তরিক, দরদি ও মনোযোগী হতে হবে। শ্রমিকদের সন্তানেরা যেন শ্রমিক না হয়ে আরও উন্নত জীবনের সন্ধান পায়, সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিজিএমইএ সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য গড়ে উঠলে অর্থনৈতিক মুক্তি দ্রুত হবে। তিনি বলেন, রাজনীতির অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন হরতাল অনেক কম হয়। তিনি খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ভবিষ্যতে ব্যবসায়ীরা হরতালমুক্ত দেশ দেখতে চায়। বিজিএমইএর অনুষ্ঠানের কারণে বৃহস্পতিবার আধা বেলা হরতাল দেওয়ায় তিনি খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
ইনস্যুরেন্স কোম্পানি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সফিউল ইসলাম বলেন, ভারতে ২৩টি কোম্পানি আর বাংলাদেশে আছে ৪৪টি কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলো কেন তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর ভর করে টিকে থাকবে। তিনি অপরিকল্পিত শিল্পায়ন বন্ধে এখনই পোশাকপল্লি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ওসমান ফারুক, বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও দ্বিতীয় সহসভাপতি মো. সিদ্দীকুর রহমান।