ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাত ধরে গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্ট শিল্প দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে অবদান রাখছে।
বছরে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ সুস্বাদু কারির স্বাদ আস্বাদ করতে ঢু মারছেন এসব রেস্টুরেন্টে। দেশটির অর্থনীতিতে যার অবদান বার্ষিক প্রায় ৪শ’ কোটি পাউন্ড।
বিশাল এই বাণিজ্য থেকে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিতে বাংলাদেশের সামনে তাই রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ।আর এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে কারি শিল্প সংশ্লিষ্ট পন্য রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের (বিসিএ) বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উঠে আসে এসব সম্ভাবনার কথা।
সম্প্রতি মধ্য লন্ডনের পার্কপ্লাজা হোটেলে সংগঠনটির বার্ষিক পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপক তাসনিম লুসিয়া খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বর্নাঢ্য এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও জনপ্রিয় তারকাসহ ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কারি শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন সংগঠনটির নব নির্বাচিত সভাপতি পাশা খন্দকার।
তিনি বলেন, “ ৫০’র দশকে শুরু হয়ে পূর্বসুরীদের হাতে গড়া এই ব্যবসা এখন ব্রিটিশ অর্থনীতির অপরিহার্য অংশ। শুধু হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানই নয়, ব্রিটিশ সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে কারি শিল্প।”
তবে তিনি এ শিল্পের আরও প্রসারের জন্য কারি ব্যবসার ওপর সরকারি ভ্যাট কমানো এবং ইমিগ্রেশন আইনের কড়াকড়ি একটা সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন।
ব্রিটেনে বছরে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ এখন বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট খাবার গ্রহণ করছে বলেও উল্লেখ করলেন তিনি।
বিসিএ বিশেষ সম্মাননা পাওয়া ব্রিটেনের নারী সংসদ সদস্য ক্যারেন বাক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “কারি শিল্পের চিহ্নিত সমস্যা সমাধানে সকলের মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। পরিপূর্ণ পৃষ্টপোষকতা পেলে প্রতিনিয়ত এই শিল্পের প্রসার ও সমৃদ্ধি ঘটবে।”
অনুষ্ঠানে মেধাবী নতুন প্রজন্মের উদ্যাক্তাদের উৎসাহিত করতে ব্রিটেনের সেরা ১২ জন শেফকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া ব্রিটেনের ১৪টি রেস্টুরেন্টকে তাদের অঞ্চলের সেরা রেস্টুরেন্ট হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।
কারি শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য এবার বিসিএ বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন বিসিএ’র সাবেক সভাপতি বজলুর রশীদ, ক্যারেন বাক এমপি ও আশরাফ উদ্দিন।
টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, “দেশের বাইরে বাংলাদেশি নিয়ন্ত্রিত এত বিশাল শিল্প অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশ সরকার সহজেই বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে।”
লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের নবনিযুক্ত হাই কমিশনার মিজারুল কায়েস বলেন, “বাংলাদেশিদের গড়া কারি শিল্পের অগ্রযাত্রায় নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা খুবই প্রয়োজন। দেশের মানুষের গড়া শিল্প থেকে বাংলাদেশ যেন লাভবান হয় তার চেষ্টা করতে হবে।”
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে গান পরিবেশন করেন ব্রিটেনের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী জেমা কেই, বাংলাদেশ থেকে আসা কণ্ঠশিল্পী আখি আলমগীর প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের রাজপরিবার থেকে শুরু করে অতি সাধারণেরও রসনা বিলাসে ব্যাপক জনপ্রিয় বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের রকমারি খাবার। বাংলাদেশিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রায় বারো হাজার রেস্টুরেন্ট নিয়ে চলতি বছর ৫২ বছরে পা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ)।