ড. কামাল বলেন, নির্বাচন হতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য হয়ে আছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফসল যারা ভোগ করছেন তারা ২০১৪-তে অন্য কাউকে ফসল ভোগ করতে দেবেন না, তা হবে না, তা হবে না। ২০১৪ সালে জনগণ আর বঞ্চিত- প্রতারিত হতে চায় না। আপনারা (সরকারি দল) এমপি থেকে নির্বাচন করবেন তা কীভাবে হয়। সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী না করলে জনগণ বুঝে নেবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আপনারা একজনও নির্বাচিত হতে পারবেন না।
‘১/১১-এর সরকারের সময় অনেক বড় বড় আইনজীবীকে দেখেছি ফতোয়া দিতে যে, সংবিধান অনুযায়ীই দুই বছর ক্ষমতায় থাকা যায়’- সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যকে ইঙ্গিত করে ড. কামাল বলেন, শুধু তো আমার সমালোচনা করছেন। কে সেদিন আমরা এটা বলেছিলাম, ভুয়া ভোটারদের বাদ দিয়ে ভোটার তালিকা ঠিক করতে এবং নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে একটু সময় নিয়ে আমি নির্বাচন করার কথা বলেছিলাম। এটা কি জনগণের পক্ষে ছিল না? ২০০৮-এর নির্বাচনের ফল এখন যারা ভোগ করছেন তারা কি কোরআন হাতে নিয়ে বলতে পারবেন কোনটা ভালো ছিল, ২০০৮- এর ২৯ ডিসেম্বরের নাকি ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন? আজ পাঁচ বছর পর যখন এ নিয়ে কথা বলা হচ্ছে তাদের বলছি, বিতর্ক করতে চান, স্বাগত জানাই, আসুন সামনাসামনি বিতর্ক করি। ইয়াজউদ্দিনের বদলে একজন ভালো লোককে সেখানে বসানো কি দরকার ছিল না? ২৭০ দিন আদালতে লড়াই করে আমি ভুয়া ভোটার তালিকা বাতিল করিয়েছি। সুতরাং এখন যারা চোখ রাঙ্গাচ্ছেন তাদের লিখিতভাবে বলতে হবে যে, ২০০৮-এর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, ২২ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়াই ভালো ছিল। যদি তারা এটা বলতে পারেন তাহলে আমি শাস্তি ভোগ করতে রাজি, নইলে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে নিরীহ কর্মজীবী বিশ্বজিত্ দাসকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে ড. কামাল বলেন, বিশ্বজিেক নূর হোসেনের সঙ্গে যোগ করা যায়। যারা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এবং যারা এজন্য নির্দেশ দিয়েছেন সবাই সমভাবে গুরুতর অপরাধী। আজকের ছাত্রসমাজ কত লজ্জা নিয়ে আসছে। তারা হত্যাকারী হচ্ছে। সভ্যতাকে বাঁচানোর জন্য যে ঐক্য হয়ে আছে সেটিকে সামনে নিয়ে এসে বলতে হবে, এই অসভ্যতাকে মেনে নেয়া যায় না। গণতন্ত্র ও সংবিধানের নামে এ ধরনের কাজ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিকভাবে গণতন্ত্রকে বাঁচানো যায় না।
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে বিশিষ্ট এই আইনজ্ঞ বলেন, দেশের ৯৯ ভাগ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, তারা এর বিচার চায়। যারা চায় না তারা ১৬ কোটির মাত্র এক শতাংশ হতে পারে, তারা সবার কাছে চিহ্নিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে হোক এটা সবাই চায়। সেখানে যদি কোনো সমস্যা থাকে, আমরা সবাই মিলে তা ঠিক করতে পারি।
সেমিনারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত রায়েই বলা আছে আরও দুইটি মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এজন্য সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী অপরিহার্য, এটা করতে হবে।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে সেলিম বলেন, এখন আবার রিমোর্ট কন্ট্রোলের খেলা চলছে। সিপিবি সভাপতি আরও বলেন, মানুষ অসহায়। দুই দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) উপর তারা বিরক্ত। এই দুইটি দলকে তারা আর দেখতে চায় না। এজন্য দরকার ভিন্ন মেরুকরণ।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, জনগণ দেশকে দুইটি দলের কাছে ইজারা দেয়নি। জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহ্্দীন মালিক বলেন, গত তিন-চারদিনের ঘটনাপ্রবাহে শঙ্কিত না হয়ে পারছি না। পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। আমার আশঙ্কা নিকট ভবিষ্যতে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।
সেমিনারে সভাপতিত্বকারী নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যতদিন পর্যন্ত আমরা ঘুরে না দাঁড়াব ততদিন বিশ্বজিতের পড়ে পড়ে মরতে হবে।