পুরান ঢাকায় বিশ্বজিত দাস হত্যাকাণ্ড তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এর দায় বিরোধীদলের ওপর চাপাতে চাচ্ছে।
বুধবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, “আপনারা দেখেছেন কীভাবে বিশ্বজিতকে প্রকাশ্যে মেরে ফেলা হয়েছে। অথচ তার খুনিদের এখনো ধরা হয়নি। আওয়ামী লীগ নিজেরা মানুষ মারছে, আর বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে।”
গত রোববার অবরোধে পুরান ঢাকায় সংঘর্ষের সময় পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারা হয় দরজি দোকানি বিশ্বজিতকে। তার ওপর হামলার জন্য ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী নাম এসেছে, তাদের কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, “আজকের অনুষ্ঠানে আমাদের মহাসচিবের থাকার কথা ছিল। বানোয়াট মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
হরতালের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, “২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ১৭৪ দিন হরতাল দিয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বেগম রোকেয়ার জন্মবার্ষিকীতে আমরা কেন হরতাল দিলাম।
“প্রধানমন্ত্রী ভুলে গেছেন- তিনি বিরোধী দলে থাকার সময়ে এই বিজয়ের ডিসেম্বর মাসে বেগম রোকেয়ার জন্মদিনে ৯, ১০ ও ১১ তারিখে ৭২ ঘণ্টা হরতাল করেছিলেন। তাদের মুখে হরতালের কথা মানায় না।”
বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণেরও আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
“দেশের আজ কঠিন সময়। আওয়ামী লীগ পাগল হয়ে গেছে। তারা দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এদের সরাতে না পারলে দেশ শেষ হয়ে যাবে। তাই আসুন, সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই, প্রতিরোধ গড়ে তুলি।”
ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে আরো শক্তিশালী করারও আশ্বাস দেন খালেদা।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা গণপরিষদের চেয়ারম্যান ইশতিয়াজ আজিজ উলফাত ও মহাসচিব সাদেক আহমেদ খানসহ পরিষদের ৯০ জন সদস্য খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আপনারা মুক্তিযোদ্ধারা এসেছেন, আমাদের সাহস আরো বেড়ে গেছে। আমাদের সঠিক ইতিহাস লিখতে হবে। আওয়ামী লীগ ইতিহাস নষ্ট করে ফেলেছে।
“আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল বলে দাবি করে। কিন্তু আমাদের তারা মুক্তিযুদ্ধের দল বলতে নারাজ। একাত্তরে আওয়ামী লীগের নেতারা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেননি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। তার গড়া এই দলই রণাঙ্গনের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দল।”
আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে আরো শক্তিশালী করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “এই দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং তার আত্মীয়-স্বজনরা জড়িত। আবুলকে (আবুল হোসেন) এত খাতির কেন? তাকে গ্রেপ্তার করলেই তো সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। দুর্নীতির সব তথ্য জানে বলেই তাকে মামলায় জড়ানো হচ্ছে না।”
দুর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “এই কমিশন সরকারের দালাল, আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কথার দুই পয়সা দাম নেই। তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দলীয়করণের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সেনাবাহিনীকে ‘ধ্বংস’ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়নের সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগের কারণে এই দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। আগেরবার আমরা পেয়েছিলাম ধ্বংসস্তূপ। আমরা ক্ষমতায় এসে তা জাগিয়ে তুলেছিলাম। এবারো ক্ষমতায় এলে দেশকে এগিয়ে দেব।”
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, হাফিজউদ্দিন আহমদ, শমসের মবিন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, জয়নুল আবদিন ফারুক, মনিরুল হক চৌধুরী, আব্দুস সালাম, ফজলুর রহমান, সোহরাব উদ্দিন, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল প্রমুখ।