তার জিনিয়াস এবং সময়ে সময়ে বেপরোয়া ব্যাটিংয়ের তোপে দুনিয়ার ঝানু ঝানু পেস বোলাররা চোখে সর্ষেফুল দেখেছেন, এখনও দেখেন। এর বিপরীতে বিধ্বংসী ওইসব বোলারদেরও সমঝে, বুঝে পরিকল্পনা মাফিক খেলতে হয় তাকে। সে সুবাদে তাদের ব্যাপারে একটা ভীতি বা সম্ভ্রমও সব সময়ে কাজ করে মনে। তিনি ভারতের ব্যাটিং বিস্ময় বা লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। তবে ক্রিকেটের জীবন্ত এই কিংবদন্তীর মতে, ফাস্ট বোলার ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি, শোয়েব আখতারদের মত বোলার বা তাদের ভয়াবহ গতির বিধ্বংসী বোলিং নয়— দুনিয়ায় তার সবচেয়ে বড় ভয় রেগে যাওয়া স্ত্রীকে।
দুই দশকেরও অধিক সময় ধরে যার ধারালো ব্যাট স্পিন-পেস নির্বিশেষে দুনিয়ার বেপরোয়া সব বোলারকে শাসন করে আসছে— তিনি শচীন। সম্প্রতি লন্ডনে এই অসাধারণ ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হন এক মারাঠি পত্রিকার সাংবাদিক। লিটল জিনিয়াস ওই সময়টায় হাসিখুশী মুডে ছিলেন। এ সুযোগে সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভয় কাকে বেশি— প্রতিপক্ষের রাগী পেস বোলার না ঘরে রেগে যাওয়া স্ত্রী?
জবাবে শচীন হেসে বলেন, আপনি তো আমাকে এখানে মুস্কিলে ফেলে দিলেন! এ মুহূর্তে আমি ঘরের বাইরে আছি, তাই বলতে পারছি— রেগে যাওয়া স্ত্রীই বেশি ভয়ংকর।
ওই আলাপচারিতায় জীবনে চলার পথে পিতা এবং বড়ভাইয়ের অসাধারণ ভূমিকার বাইরে ৩ জন নারীর অবদানের কথা স্বীকার করেছেন শচীন। এ ৩জনের বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার মায়ের কথা দিয়ে শুরু করবো। মায়ের স্থান কেউ নিতে পারে না। আমি যাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করতে পারি সেজন্য তিনি আমার পর্যাপ্ত খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটায় বেশ খেয়াল রাখতেন। তিনি কর্মজীবী নারী হয়েও সারাদিন কর্মস্থল সামলে আবার পরিবারের সবকিছুও সামলাতেন, যা বাস্তবে কঠিন। ঘর-অফিসের ঝামেলা সামলে আমার মত ডানপিটে স্বভাবের ছেলেকেও দেখাশোনা করতে হতো তার। এই অসম্ভব পরিস্থিতি সামলেও মুখে সব সময়ে হাসি ধরে রাখার জন্য প্রচুর সাহসের প্রয়োজন হয়— কিন্তু তিনি তা পারতেন। আমার মা খুব শক্ত একজন নারী।
আমার জীবনে অবদান রাখা দ্বিতীয় নারী হচ্ছেন আমার আন্টি। ৪ বছর আমি আঙ্কেল ও আন্টির সঙ্গে ছিলাম। কারণ, যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করলাম তখন আমাকে স্কুল বদলাতে হলো। বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে দু’বার বাস বদলাতে হতো। এরপর আবার অনুশীলনের জন্য মাঠে ছুটতে হতো। এ কারণে আমার পরিবার আমাকে আন্টির বাড়িতে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখান আমার অনুশীলন মাঠ কাছেই ছিল। আর স্কুলটাও ছিল আন্টির বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের পথ।
শচীনের জীবনে এরপরের গুরুত্বপূর্ণ নারী হলেন (তারচেয়ে বয়সে কিছুটা বড়) স্ত্রী অঞ্জলী। লিটল মাস্টারের ভাষায়, সবশেষ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই নারী আমার স্ত্রী অঞ্জলী। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন জীবনের নতুন অর্থ। ১৯৯০ সালে তার সঙ্গে পরিচয় আর এখন তিনি আমাকে ২১ বছর ধরে জানেন। এটা একটা বিরাট সময়। আমার কেরিয়ারের উত্থান-পতনে, ওইসব খারাপ সময়ে যখন আমি আহত ছিলাম— আমার সঙ্গে ছিলেন। আমার জীবনের কঠিন সময়ে তিনি আমাকে জীবনের অপর এক অধ্যাযের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। যাখন আহত, হতাশ থাকতাম তখন তিনি আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছেন। ঈশ্বর আমাকে যা দিয়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আর যা দেননি তার জন্য অনুযোগ না করা— তিনিই শিখিয়েছেন আমাকে। এভাবে জীবনকে আলাদাভাবে দেখার ফলে আমার ক্যারিয়ার যথেষ্ট ঋদ্ধ হয়েছে। এজন্য আমি তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।