আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান তেল-গ্যাস রপ্তানির কোনো সুযোগ থাকছে না।

বঙ্গোপসাগরের ১২টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলা।

যাতে তেল-গ্যাস রপ্তানির কোনো সুযোগ থাকছে না।

রোববার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পরিচালক (পিএসসি) ইমাদ উদ্দীন এ তথ্য জানান।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত দরপ্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। এরপর যাচাই বাছাই করে জুলাইয়ের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হবে।”

নতুন মডেল পিএসসির (উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি) আওতায় এবারের দরপত্রে তেল-গ্যাস রপ্তানির কোনো সুযোগ রাখা হয়নি বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে ইমাদ উদ্দীন বলেন, “এবারের পিএসসিতে রপ্তানি সংক্রান্ত কোনো শব্দ নেই।”

গভীর ও অগভীর সমুদ্রের ১২টি ব্লকে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য গত সেপ্টেম্বরে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয় মডেল পিএসসি ২০১২।

এর আগে মডেল পিএসসি ২০০৮-এ গ্যাস রপ্তানির সুযোগ রাখা ছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, সরকার বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি গ্যাস না কিনলে তা তরল আকারে (এলএনজি) রপ্তানি করার সুযোগ পাবে উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান।

এই পিএসসিতে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের অংশীদারিত্বের সুযোগ রাখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি অগভীর সমুদ্রের নয়টি ব্লকে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে ১০ শতাংশ পর্যন্ত অংশীদারিত্ব পাবে।

নতুন মডেল পিএসসিতে বলা হয়েছে, অনুসন্ধানের পর তেল-গ্যাস পাওয়া গেলে প্রথমে তা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা প্রেট্রোবাংলার কাছে বিক্রির জন্য প্রস্তাব দিতে হবে। পেট্রোবাংলা না কিনলে অভ্যন্তরীণ বাজারে তৃতীয় পক্ষের কাছে প্রস্তাব দিতে হবে।

নতুন পিএসসিতে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে পেট্রোবাংলার মুনাফা বণ্টনের হার আগের পিএসসির মতোই থাকলেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।

ইমাদ উদ্দীন জানান, অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস পাওয়া গেলে তার ৫৫ থেকে ৮০ শতাংশ এবং গভীর সমুদ্রের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পাবে পেট্রোবাংলা। আর বাকিটা পাবে উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান।

এবারের দরপত্রে প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সর্বোচ্চ ফ্লোর মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় পাঁচ ডলার। এর সঙ্গে যুক্ত হবে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করপোরেট কর। এর আগের মডেল পিএসসিতে এই মূল্য সাড়ে চার ডলার, তার সঙ্গে একই হারে কর। তারও আগের মূল্য ছিল কোনো করপোরেট কর ছাড়াই দুই দশমিক ৯০ ডলার।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “দেশের স্বার্থ এবং বিডারের (দরপত্রে অংশগ্রহণকারী) স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে। কারণ, দেশের জন্য সবচেয়ে ভালো করতে গেলে তখন বিডার পাওয়া যায় না। আবার বিডারের জন্য সবচেয়ে ভালো করতে গেলে তখন দেশের স্বার্থ ক্ষুণœ হয়।”

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পেট্রোবাংলার পরিচালক ইমাদ বলেন, “সম উত্তাপের ভিত্তিতে প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭ থেকে ৮ ডলার হলে কনট্রাক্টরের জন্য ভালো। কিন্তু ৩ ডলার হলে দেশের জন্য ভালো। আমরা এ দুটির মাঝামাঝি ঠিক করেছি।”

সমুদ্রবক্ষের এই ১২টি ব্লকের মধ্যে অগভীর সমুদ্রে নয়টি ও গভীর সমুদ্রে তিনটি ব্লক আছে। এগুলোর মধ্যে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক অগভীর সমুদ্রের। আর গভীর সমুদ্রে রয়েছে ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লক।

মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিস্পত্তির পর গভীর সমুদ্রের এই তিনটি ব্লক পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।

এর আগে ১৯৯৩, ১৯৯৭ ও ২০০৮ সালে মডেল পিএসসির আওতায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।

সর্বশেষ মডেল পিএসসির আওতায় ডাকা দরপত্রে মনোনীত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কনোকো ফিলিপস বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য বাংলাদেশ