১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার যাওয়াকে ‘ভান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিজয়ের মাসে অবরোধ কর্মসূচি ডাকার সমালোচনা করে এই মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “১৪ ডিসেম্বর কি মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যান?”
“যদি যান, কেন যান? ওই বুদ্ধিজীবীদের যারা হত্যা করেছিল- তাদের রক্ষার জন্য একদিকে আন্দোলন করেন।”
“স্মৃতিসৌধে সম্মান দেখাতে গিয়ে কী … কী করেন? কী বলব, ভান করেন ?”
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আগ মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয় বুদ্ধিজীবীদের, যার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করা হয়, যে দলটির অনেকে বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের জন্য বিচারের সম্মুখীন।
গণভবণে শনিবার হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার প্রারম্ভিক বক্তব্যে শেখ হাসিনা ডিসেম্বর মাসে ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচিকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন।
“ডিসেম্বর মাস বেছে নিয়েছেন রাজাকার আর আল বদর বাঁচাতে, এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী আছে ?”
“তাদের (যুদ্ধাপরাধী) বিচারটা হোক- এটা যদি চান, তাহলে এই আন্দোলনের কর্মসূচি কেন,” বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন শেখ হাসিনা।
“ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। জনগণ এই মাসে বিজয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর নামে জনগণকে কষ্ট দেবেন না। জনগণ তা মেনে নেবে না। জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। এটা জনগণের দাবি।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, তাদের তো তারা (বিএনপি) ছেড়েই দিয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে বিএনপি আন্দোলন করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে। তাদের বিচার ঠেকাতে।”
নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালে বিএনপির দাবির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “উনি (খালেদা জিয়া) কি ভালো পাগল ও শিশু খুঁজে পেয়েছেন?”
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে মাগুরা উপ-নির্বাচনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের দাবির জবাবে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছিল।
“ওনার (খালেদা জিয়া) দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদককে প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য বয়স কমিয়েছিলেন। কিন্তু, তা না পেরে ইয়াজউদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টা করলেন। ইয়াজউদ্দিন ‘ইয়েসউদ্দিন’ হয়ে গেল।”
ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগকারীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা তখন পদত্যাগ করলেন, এখন তারা তত্ত্ব কথা বলেন। আমার প্রশ্ন, পদত্যাগ করলেন কেন?
“গাটস্ ছিল না কেন একটা নির্বাচন করার। তাদের কারণেই ওয়ান ইলেভেন এসেছিল।”
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রাজনীতিকদের ওপর নির্যাতনের কথা বিরোধীদলীয় নেতাকে স্মরণ করিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনি যে আবার চাচ্ছেন- তখন তো ছেলেদের বের করে দিয়েছে।
“এখন তো আন্তর্জাতিক আদালত থেকে রায় দিয়েছে। এখন আপনার ছেলেদের ধরে এনে যে শাস্তি দেবে না- এর নিশ্চয়তা কী?”
“তখন তো আপনার লোকদের বসিয়েছিলেন। এখন যারা বাতাস দিচ্ছে .. তার নিশ্চায়তা কী?”
হবিগঞ্জের উপ-নির্বাচনে বারশ’ ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হেরে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা ক্ষমতায় থাকলে তো এই রেজাল্ট বদলে দিতেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। নির্বাচনের সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। তারাই সব সিদ্ধান্ত নেয়। কাকে কোথায়, কোন দায়িত্ব দেবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনভাবে কাজ করছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা- যখন খুশি ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আমরা কোনো রকম হস্তক্ষেপ করছি না।”
বক্তব্যে বিএনপি সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি আগামীতে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে দেশ ‘জঙ্গিবাদী’ রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাভাইয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কুশাসন সৃষ্টি করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।”
হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে অপারেশন ক্লিনহার্টে দেড়শ’ মানুষ মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এই হত্যাকা-ের বিচার যেন না হয়- সেজন্য তারা (তৎকালীন সরকার) ইনডেমনিটি দিয়েছে।”
বিভিন্ন সময়ে জামায়াত-শিবিরের হামলার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “কুড়াল দিয়ে তারা মানুষের হাত-পায়ের রগ কেটেছে।”