বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি এখন বৃটিশ সাময়িকী দ্যা ইকোনমিস্টের দিকে। দু’টি বিষয়ে খেয়াল রাখছেন সবাই। প্রথমত, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হকের সঙ্গে ব্রাসেলসভিত্তিক মানবাধিকার আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্ক্যাইপি কথোপকথনের তথ্য ইকোনমিস্ট প্রকাশ করে কি না? দ্বিতীয়ত, পত্রিকাটির দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরোর প্রধান অ্যাডাম রবার্ট ও চীনা সংস্করণের সম্পাদক রব গিফোর্ড ট্রাইব্যুনালের দেয়া শোকজ নোটিশের জবাব দেন কি না। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বৃহস্পতিবার ইকোনমিস্টকে শোকজ করে। একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হকের ই-মেইল এবং স্ক্যাইপি একাউন্ট হ্যাক করে প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ না করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইকোনমিস্ট এ সম্পর্কিত কোন রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। ইকোনমিস্টের চীনা সংস্করণের সম্পাদক রব গিফোর্ডকে এ ব্যাপারে জানতে এ রিপোর্টার ই-মেইল পাঠালেও এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। ১৮৪৩ সালে ব্যাংকার জেমস উইলস ইকোনমিস্ট পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশ করেন। আকারের দিক থেকে ম্যাগাজিন হলে ইকোনমিস্ট নিজেকে সংবাদপত্রই দাবি করে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, পত্রিকাটির সার্কুলেশন ১৫ লাখ। পত্রিকাটি এরআগেও বাংলাদেশ সম্পর্কে বহু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কখনও তা হয়েছে নিন্দিত, কখনও নন্দিত। তবে বৃহস্পতিবারই প্রথম বাংলাদেশের কোন আদালত পত্রিকাটির বিরুদ্ধে কোন আদেশ দিলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এমন একটি সময়ে ইকোনমিস্টকে শোকজ করলো যখন যুদ্ধাপরাধের বিচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের দেয়া আদেশে বলা হয়, এ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং অন্য দু’ সদস্য বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। এ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর যখন চেয়ারম্যান এবং সদস্য নিয়োগ দেয়া হয় তখন উন্মুক্ত আদালতে এটা বলা হয়েছে যে, ট্রাইব্যুনাল আইনটি তাদের জন্য নতুন। এটা বুঝার জন্য অন্য ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম, আইন পর্যবেক্ষণ, উভয়পক্ষের আইনজীবীদের এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রয়োজন। এ প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের অগ্রগতি সম্পর্কে মাঝে মাঝে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং তার সহযোগিতা নিয়েছেন। বিচার কার্যক্রম চলাকালেও ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তার সহযোগিতা নিয়েছেন। এ উদ্দেশ্যে তারা স্কাইপির মাধ্যমে আলোচনা করেছেন। দু’ অথবা তিন দিন আগে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান দেখতে পান তার ই-মেইল এবং স্কাইপি একাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে। বুধবার লন্ডন ভিত্তিক দ্যা ইকোনমিস্ট থেকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানকে ফোন করা হয়। ফোন করে বলা হয়, তিনি ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে যে আলোচনা করেছেন তা ইকোনমিস্টের কাছে আছে। এবং এ ব্যাপারে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করা হয়। চেয়ারম্যানকে এও বলা হয়, তিনি প্রতিনিয়ত আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে স্ক্যাইপিতে কথা বলেছেন এবং ই-মেইলের মাধ্যমে তার পরামর্শ নিয়েছেন। ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানকে যেসব ই-মেইল করেছেন তাও ইকোনমিস্টের কাছে রয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের ই-মেইল এবং স্কাইপি একাউন্ট হ্যাক করে ব্যক্তিগত তথ্য নেয়া ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লংঘন এবং সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টার শামিল। আইন অনুযায়ী বিচারপতিকে ফোনও করা যায় না। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এও জানতে পেরেছেন, ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের ই-মেইল এবং স্ক্যাইপি একাউন্টও হ্যাক করা হয়েছে। এটা পরিস্কার যে, যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্থ করতে চান তারাই এ কাজে জড়িত। এটা চলতে দেয়া যায় না।