মামলার রায় ঝুলিয়ে রাখায় বিচারকের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ

 

রাজনৈতিক চাপের ‘অজুহাত’ দেখিয়ে ব্যাংক ডাকাতির একটি মামলার শেষ পর্যায়ে এসেও রায় না দিয়ে দুই বছর ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারক ওই পদে থাকতে পারেন না বলেও মত দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত দেওয়া রায়ের কপিতে সই করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

ঘটনাটি আইন অনুসারে তদন্ত করতে আইন সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন, অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোশাররফ হোসেন সরদার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গাজী মো. মামুনুর রশীদ।

হাইকোর্ট সূত্র জানায়, পূবালী ব্যাংকের তেজগাঁও শাখায় ২০০২ সালের ১১ নভেম্বর একটি ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি ওই সময় অতিরিক্ত দায়রা জজের দায়িত্বে থাকা বিচারক মো. মাহবুবুর রহমানের (বর্তমানে ঢাকার শ্রম আদালত-২ বিচারক) আদালতে ছিলো। ২০১০ সালে মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে ছিলো। এরপর রায় দেওয়ার কথা। কিন্তু এরপর এর কার্যক্রম আর অগ্রসর হয়নি। পরে ওই মামলার আসামি নুর হোসাইন ওরফে লেদু মামলাটি অন্য আদালতে স্থানান্তরে হাইকোর্টে আবেদন করেন।

এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ওই বিচারককে শোকজ নোটিশ দেন। ৩০ জুলাই বিচারক মাহবুবুর রহমান এ নোটিশের জবাব দেন।

জবাবে বিচারক জানান, মামলার আসামি পক্ষ অত্যন্ত চতুর ও প্রভাবশালী এবং তারা উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। তাই অত্র মামলাটির বিচার কাজ চালাতে আমি বিব্রতবোধ করছি।

রাজনৈতিক চাপের বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, এটা কেবলমাত্র বিস্ময়করই নয়, বরং এটা বিচারিক কর্ম সম্পাদনে ওই বিচারকের অযোগ্যতাই প্রকাশ পায়। গত দুই  বছর এই চাপের কথা তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কিনা। তা তিনি তার জবাবে উল্লেখ করেননি। তার এই যুক্তি গ্রহণ করলে এটাই স্পষ্ট হবে যে, তিনি তথাকথিত চাপে পড়ে তার বিচারিক দায়িত্ব সম্পাদন থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন।

এ অবস্থায় আমাদের মত হচ্ছে, উঁচু বিচারিক পদে থেকে তিনি অযাচিত চাপে নিজেকে বিচার কাজ থেকে বিরত রেখেছেন। তাই তিনি বিচারিক কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত যোগ্য নন।

আদালত একইসঙ্গে মূল মামলার আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্য নিয়ে এবং যুক্তিতর্ক শেষ করে ছয় মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।

অন্যান্য বাংলাদেশ