মোবাইলভিত্তিক ইন্টারনেটের সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইয়াহু। এখন মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
এজন্য মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইয়াহুকে আবার আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে চান প্রতিষ্ঠানটির নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মারিসা মায়ার।
ইন্টারনেটের ব্যবহারে পিসি থেকে সেলফোন, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের দিকে গ্রাহকদের মনোযোগ চলে যাওয়াকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন মায়ার। ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব শুরুর পর গত ফরচুনকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে মায়ার এ তথ্য দিয়েছেন।
গুগল থেকে ইয়াহুতে চলে আসা এ আলোচিত নারী ইয়াহু নিয়ে তার পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেলফোনের ইন্টারনেটে মানুষ যা চায়, তার সবই আমাদের আছে। তাই এ বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করার সুযোগ আছে।
ইন্টারনেটে ভালো অবস্থানে থাকার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সব কিছুই করা সম্ভব। মানুষ সেলফোনে ইন্টারনেট থেকে যা চায়, তা আমরা দিতে পারি। এ দিকেই তাই বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। গত অক্টোবরে ইয়াহুর পক্ষে প্রতিটি কর্মীকে আইফোন-৫ স্মার্টফোন উপহার দিয়ে আলোচিত হন।
মারিসা মায়ার জানান, এখন সেলফোনে ইন্টারনেট জনপ্রিয়। মানুষ এখান থেকে কি চায়, তা জানতে কাজ করছে ইয়াহু। এ জন্য ইয়াহুর কর্মীদের অ্যানড্রইড, আইওএস ও উইন্ডোজ৮ চালিত স্মার্টফোন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন মায়ার।
স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেমগুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই আমাদের সব প্রকৌশলী, বিপণন বিভাগের কর্মী এ অপারেটিং সিস্টেমগুলো ভালোভাবে বুঝুক। এ জায়গায় ঠিক কি হচ্ছে, সে বিষয়ে জানুক। ফলে আমরা বুঝতে পারব, এখানে আমাদের কী কাজ হওয়া উচিত।
মায়ার বলেন, সেলফোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের অসাধারণ অভিজ্ঞতা দিতে চাই আমরা। এ জন্য প্রথমে আমাদের বিষয়টি বুঝতে হবে। তাহলেই আমরা ভালো সেবা দিতে পারবো।
মায়ারের মতে কোনো ধরনের হার্ডওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম তিনি আপাতত জরুরি নয়। সেলফোনের মাধ্যমে মানুষ মেইলসহ সব সুবিধা চায়। সংবাদ ছাড়াও জানতে চায় আবহাওয়া, শেয়ারবাজার ও খেলার তথ্য। এর মাধ্যমে তারা সিনেমা দেখতে চায়, সামাজিক যোগাযোগের সাইট ব্যবহার করতে চায় এবং বিভিন্ন খবর জানতে চায়। এর সব সুবিধাই আমরা দিয়ে থাকি।
প্রযুক্তি জগতের কিছু খাতে ইয়াহুর অনুপস্থিতিকেও প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি সুযোগ মনে করছেন তিনি। এ বিষয়ে মায়ার বলেন, আমাদের কোনো মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম নেই। নেই মোবাইল হার্ডওয়্যার, ব্রাউজার কিংবা সামাজিক যোগাযোগের সাইট। ফলে এসব খাতের সেরাদের সঙ্গে আমরা অংশীদারিত্ব করতে পারব।
সম্প্রতি মা হওয়া মায়ার সন্তানকে নিয়েও কথা বলেন। সন্তান লালন-পালনের অভিজ্ঞতার কথাও তিনি জানান। তার ভাষায়, সন্তান লালন-পালন করা যতটা কঠিন হবে ভেবেছিলাম, আসলে ততটা নয়। ইয়াহুও কাজ করার একটি দারুণ জায়গা।
তিনি বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোই তিনি মনোযোগ দিচ্ছেন। সৃষ্টিকর্তা, পরিবার ও ইয়াহু— এভাবে তিনি গুরুত্বের ক্রম সাজিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মারিসা ১৯৯৯ সালে গুগলে যোগ দেন। তিনি গুগলের সার্চ ইঞ্জিন এবং হোম পেজ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ইয়াহুর আগে মায়ার গুগলের ম্যাপিং সার্ভিসে (গুগল ম্যাপস, আর্থ, লোকাল ও স্ট্রিট ভিউ) কাজ করছিলেন।
বলা যায় নিজের কর্মযোগ্যতা প্রমাণ করে মারিসা মায়ার ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব পেয়েছেন। মন্দায় থাকা ইয়াহু তাকে ঘিরে আশা করতেই পারে। এ মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটিকেও তিনি তার সাবেক প্রতিষ্ঠান গুগলের মতো সফল করতে পারেন কি না, তা দেখার অপেক্ষায় প্রযুক্তিপ্রেমীরা।
ইয়াহু একটি বৃহৎ ইন্টারনেটভিত্তিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানিভেল শহরে এর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। ডেভিড ফিলো ও জেরি ইয়াং ইয়াহু এর প্রতিষ্ঠাতা। ইয়াহুর আছে ওয়েবসাইট, সার্চ ইঞ্জিন, ডিকশেনারি, মেইল, নিউজ, ইয়াহু গ্রুপ, ইয়াহু এন্সার, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট, অনলাইন ম্যাপ, ইয়াহু ভিডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়া সেবা।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালের শেষদিকে ইয়াহু প্রথমবার সাইটে ব্যানার অ্যাড দেওয়া শুরু করে। ইয়াহু কর্তৃপক্ষের সব আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে বিজ্ঞাপণ দেওয়ার পরও তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমার বদলে বাড়তে থাকে।
ইন্টারনেটের ইতিহাসে প্রথমবার ইয়াহু প্রমাণ করে ইন্টারনেট থেকেও টাকা আয় করা সম্ভব। ইয়াহু দাবি প্রতি মাসে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫ কোটি মানুষ ৩০টি ভাষায় ইয়াহু ব্যবহার করে।