যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতেই জামায়াতের হরতাল। আর এতে সমর্থন দেয় বিএনপি। তার মানে নৈতিকভাবে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না।”

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত ১৪ দলের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি চান। সেটা জামায়াতের হরতালে নৈতিক সমর্থন দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যারা গণহত্যা করেছিল, অগ্নিসংযোগ করেছিল, লুটপাট করেছিল তাদের মুক্ত করার জন্য বিএনপি হরতালে সমর্থন দিয়েছে এর চাইতে লজ্জার আর কি আছে?”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু অর্ডিন্যান্স জারি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করেছিলেন। সেই বিচারে অনেকের সাজাও হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তাদের মুক্ত করে দেন। আমরা ওয়াদা করেছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। যুবসমাজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, সেটা শুরু করেছি। অনেকের সন্দেহ ছিল, এই বিচার এতদিন পর করা যাবে কিনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আইন সংশোধন করে আপিলের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে কেউ বলতে না পারে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কিছু করছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে। আর এদের মূল দল তো বিএনপি। এরা এক হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর পাঁয়তারা করছে। ৩ ডিসেম্বর ভুটান সর্বপ্রথম আমাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়, সেই দিন জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। এটা কত বড় আবদার।”

তিনি বলেন, “আগুন দিয়ে, ভাংচুর করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায়। একাত্তরে তারা যা করেছিল আবার তাই করতে চায়। তবে জামায়াতের এ হরতালে দেখলাম অনেক জায়গায় সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য জামায়াত-শিবির যাতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সকলকে এভাবে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় বের হবার দিনও হরতাল দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু বিচার ঠেকাতে পারেনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে রায় হোক, তা আমরা কার্যকর করতে পারবো। জনগণ ওদের সঙ্গে নেই। হরতাল দিয়ে পুলিশ মেরে, মানুষ হত্যা করে, বোমাবাজি, ভাংচুর করে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো যাবে না। এসব করে কোনো লাভ হবে না।”

প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের সফলতা তুলে ধরে বলেন, “দেশের মানুষের ঘরে ঘরে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেওয়া, দারিদ্র দূর করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সর্বক্ষেত্রে সফলও হয়েছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রফতানি বেড়েছে। বৈদেশিক রিজার্ভ ১২০০ কোটি ডলারের ওপর। একটি শক্তিশালী অর্থনীতির ওপর দেশকে দাঁড় করাতে পেরেছি।”

তিনি বলেন, “মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার ইতিহাস জানতে পারছে এবং চর্চা করতে পারছে। অতীতে শুধু ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ১৯৯৬-তে আমরা ক্ষমতায় না এলে নতুন প্রজন্ম দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারত না।”

সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করতে জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপিও ষড়যন্ত্র করছে। এদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বিচার কাজ এগিয়ে নিতে হবে। জনগণকে এই প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করলে তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।”

জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় দেওয়া প্রয়োজন। রাজনীতিতে সহঅবস্থানের কোনো সুযোগ নেই। জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক চক্র খালেদা জিয়ার লাঠি। লাঠির উপর আঘাত করবেন কিন্তু লাঠির মালিককে কিছু বলবেন না সেটা হয় না। গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে জামায়াত ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে হবে।”

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক শিল্পমন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম, গণআজাদী লীগের হাজী আব্দুস সামাদ, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত বরণ রায়, গণতন্ত্রী মজদুর পার্টির জাকির হোসেন প্রমুখ।

সভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফালেয় আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফরউল্লাহ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, মোহাম্মদ নাসিম প্রমুখ।

সভায় ১৪ দলের নেতারা জামায়াতের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে সংগঠনটির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

অন্যান্য বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর