ফরমালিনমুক্ত বাজার গড়তে কাজ করবে দেশের বণিক ও শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) ও ওয়ালটন ( আর বি গ্রুপ)। ‘মুনাফা নয়, লোকসান নয়’- এমন নীতিতে ওয়ালটন এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
দেশের কাঁচাবাজারগুলোতে ফরমালিন প্রতিরোধে বিশেষ ধরনের মাল্টি-লেয়ার ফ্রিজ সরবরাহ করতে এফবিসিসিআই ও ওয়ালটন একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে এ প্রতিষ্ঠান দুটির শীর্ষ কর্মকর্তা।
ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিবিসিসিআই এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
উল্লেখ্য, ৩০০ থেকে ৫০০ লিটার ধারণ ক্ষমতার এ মাল্টি-লেয়ার ফ্রিজের দাম পড়বে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আমদানি করা এ ধরনের ফ্রিজ বর্তমান অভ্যন্তরীণ মার্কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ২ থেকে ৩ লাখ টাকায়।
জানা গেছে, ওয়ালটনের বিশেষ ধরনের এ ফ্রিজ ব্যবহার করে ফরমালিন ছাড়াই ব্যবসায়ীরা তাদের মাছ, মাংস, কাঁচা তরিতরকারি এবং ফলমূল টাটকা রাখতে পারবেন। কারণ পচনশীল দ্রব্য টাটকা রাখতেই সাধারণত ফরমালিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু ওয়ালটনের বিশেষ এ ধরনের ফ্রিজ ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা তাদের পচনশীল পণ্য সংরক্ষণ করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আশরাফুল আলম বলেন, এ প্রকল্পটি শুধুমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। মুনাফা নয়, লোকসান নয়, এমন নীতি অনুসরণ করে দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য এ ধরনের ফ্রিজ উৎপাদন করা হবে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে নতুন ফ্যাক্টরীর কাজ শুরু হবে। আমরা বিভিন্ন তাপমাত্রার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের ফ্রিজ উৎপাদন করবো।
তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ৫০কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণত পণ্যদ্রব্য হিমায়িত করার সুযোগ-সুবিধার অভাবে ব্যবসায়ীরা খাদ্যদ্রব্য, মাছ-মাংস, শাক-সবজি এবং ফলমূলে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে থাকেন। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য ফ্রিজের বিশেষ নকশা করা হচ্ছে।
ওয়ালটনের এমডি বলেন, এফবিসিসিআই এ বিষয়ে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে। সংগঠনটির প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ ধরনের মাল্টি-লেয়ার বাণিজ্যিক ফ্রিজ উৎপাদন করা হবে। এ লক্ষ্যে আমরা আলাদা একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আশরাফুল আলম বলেন, বাণিজ্যিকভাবে ফ্রিজ উৎপাদনের জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ লিটার ধারণ ক্ষমতার জন্য একটি বিশেষ ডিজাইনও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ফরমালিনমুক্ত বাজার করার লক্ষ্যে এফবিসিসিআইয়ের নেওয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, মাছ ও ফলমূলে ফরমালিন ব্যবহার প্রতিরোধে এ ধরনের ফ্রিজ ব্যবহার হচ্ছে উপযুক্ত সমাধান।
আশরাফুল আলম আরও জানান, ফ্রিজের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ফরমালিন সনাক্তকরণ কিডস্ও সরবরাহ করা হবে। এ ধরনের মাল্টি-লেয়ার ফ্রিজ উৎপাদনের জন্য ওয়ালটনের রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট দল শক্তিশালী করা হয়েছে। বর্তমানে এ শাখার কর্মকর্তারা অভিজ্ঞতা অর্জনে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও চীন সফর করছেন।
এ ব্যপারে এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল ও ফরমালিন ইস্যুতে এফবিসিসিআই কোনো আপোষ করবে না। ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা যায় ওয়ালটনের এমন ফ্রিজ খুব সহজে বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। কেননা একটি বাজারে কম করে হলেও প্রতিমাসে ৩ লাখ টাকার বরফের প্রয়োজন হয়।
কিন্তু, ওয়ালটনের মাল্টি-লেয়ার ফ্রিজ ব্যবহার শুরু হলে বরফের ব্যবহার কমে আসবে। একটি পর্যায়ে হয়তো বরফের আর প্রয়োজন হবে এদিকে, ফরমালিনমুক্ত বাজার গড়ার লক্ষ্যে আধুনিক বিশ্বে মাল্টি-লেয়ার ফ্রিজের ব্যবহার অনেক আগেই শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও এ ধারণা একেবারে নতুন নয়। তবে ফ্রিজের দাম বেশি ও উৎপাদন না থাকার কারণে এর ব্যবহার সে ভাবে বাড়েনি। তবে ওয়ালটন মাল্টি-লেয়ার ফ্রিজ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ায় মানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। এ ধরনের ফ্রিজ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শুরু হলে আগামীতে দেশের সব কাঁচাবাজার ফরমালিনমুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তিনি মনে করেন।