ঢাকা: নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে তিনি আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, “সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী যথা সময়েই নির্বাচন হবে।”
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের জন্য নির্ধারিত সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এ সভা। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় প্রধানমন্ত্রী দলীয় এমপিদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া আনা হয়েছে সেটা অনুসরণ করে যথাসময়েই নির্বাচন হবে।”
উল্লেখ্য, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রাখা হয়েছে সংবিধানে।
সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সম্পর্ক বাড়ানো এবং তাদের যথাযথ মুল্যায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রী এমপিদের উদ্দেশ্যে বলেন, “দলের তৃণমূলের ভোট পেতে হবে। তৃণমূল থেকে নির্বাচিত হতে না পারলে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া যাবে না।”
“আমার কাছে সবার এলাকায় পরিচালিত জরিপের রির্পোট আছে। বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টের পাশাপাশি দলীয়ভাবেও জরিপ করা হয়েছে। দু’দফায় এই জরিপ চালানো হয়েছে। আরেক দফার জরিপ চলছে। এই সব জরিপ রিপোর্টের ভিত্তিতে এবং তৃণমুলের ভোটে নির্বাচিতরাই মনোনয়ন পাবেন।”
‘যত বড় নেতাই হোক, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে মনোয়ন পাবেন না’, বলে এ সময় সংসদ সদস্যদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।এ সময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় কর্মকান্ডের মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব এবং অপতৎপরতা প্রতিহতের নির্দেশ দিয়েছেন।
‘জামায়াত শিবির পরিস্থিতি যাতে অশান্ত করতে না পারে সে জন্য সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে হবে’, বলে এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে সংসদ সদস্যদের প্রত্যেকের এলাকায় বিজয় মেলা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধীদের অপতৎপরতা জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরতে হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনা হয়েছে। এটা সরকারের অনেক বড় সাফল্য। এ কারণেই খালেদা জিয়া এতো হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।”
সরকারের সাফল্য প্রচারের পাশাপাশি এ বিষয়টিও জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা ভালো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের অবস্থান শুধু ঢাকায় এবং টেলিভিশন টক শোতেই ভালো না। তৃণমূল পর্যায়ে অবস্থা ভালো।”
সূত্র জানায়, সভায় সংসদ সদস্যরা বুধবার ১৮ দলের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুমকি দেওয়ায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবর রহমানের গ্রেফতার দাবি করেন।
এছাড়া সংসদ সদস্যরা তাদের জন্য পূর্বের বরাদ্দ করা ১৫ কোটি টাকা ছাড় দেয়ারও আহ্বান জানান।
পাশাপাশি সরকারের নেওয়া যে সব প্রকল্প ঝুলে আছে সেগুলো দ্রুত শেষ করার তাগিদও দিয়েছেন সংসদসদস্যরা।
সারা দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার তাগিদ দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন আরো বাড়ানোরও দাবি জানান সংসদ সদস্যরা।
এ সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে জনগণের সামনে সরকারের সফলতাগুলো তুলে ধরতে তাদের সুবিধা হবে বলে মতামত দিয়েছেন তারা।