পিলখানায় লুণ্ঠিত ৫০ গ্রেনেড ও ৭২ অস্ত্রের হদিস নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পিলখানায় লুণ্ঠিত ৫০ গ্রেনেড ও ৭২ অস্ত্রের হদিস নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সংসদ ভবন থেকে : ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় লুণ্ঠিত ৫০টি গ্রেনেড ও ৭২টি আগ্নেয়াস্ত্রের কোন হদিস এখনও পাওয়া যায়নি। পিলখানা থেকে ঘটনার সময় ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রও লুট করা হয়েছিলো।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ তথ্য জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর।মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রশ্নের জবার দেন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু।

ফরিদুন্নাহার লাইলীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় অনাকাঙ্খিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় লুণ্ঠিত ও হারানো আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেনেডের সংখ্যা ৩৩২টি। গ্রেনেড লুট করা হয়েছিলো ২১১টি। পিস্তল ৮৩, রাইফেল ১৭ এবং শর্ট মেশিন গান বা এসএমজি পাঁচটি। লুণ্ঠিত ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে পিস্তল ১১, পয়েন্ট টু টু বোর গান তিন ও সিঙ্গেল ব্যারেল গান দুইটি।

তিনি জানান, এ পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ২১০টি। এরমধ্যে গ্রেনেডের সংখ্যা হচ্ছে ১৬১টি। তিন ধরণের ৯৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ৩৯টি। এখনো ৬৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫০টি গ্রেনেড উদ্ধার করা যায়নি। ব্যক্তিগত তিন ধরনের ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছিলো। উদ্ধার করা হয়েছে ১০টি এবং ছয়টি উদ্ধার করা যায়নি।

সীমান্তে ১৭ বছরে ৭১৭ হত্যাকাণ্ড

জামায়াতের অনুপস্থিত সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সীমান্ত এলাকায় রাতের অন্ধকারে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালানীদের অন্তঃকলহ, সীমান্তরক্ষীদের ওপর উভয় দেশের সংগঠিত চোরাচালানীদের সংঘবদ্ধ আক্রমণের ঘটনা ঘটে। আর এসব কারণে সীমান্তে ভারতের বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়ে থাকে।

তিনি আরো জানান, ১৯৯৬ থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১৭ বছরে বিএসএফ ৭১৭ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। আহত হয়েছে ৫৭০ জন। বাংলাদেশি নাগরিকদের বিএসএফ গুলিবর্ষণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছে।

তিনি জানান, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ২০০৬ সালে ৯৫ জন। আর সবচেয়ে কম ১৯৯৬ সালে ৭ জন।

নাছিমুল আলম চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সাগরে জলদস্যুদের প্রায় ৪০টি আস্তানা ধ্বংস করেছে কোস্টগার্ড। বিভিন্ন অভিযানে তারা এ পর্যন্ত দুই হাজার ২৫৩ জন জলদস্যুকে আটক করেছে। এছাড়াও ২১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও এক হাজার ৮৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

আসমা জেরীন ঝুমুর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে সকল সদস্যরা নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে অনৈতিক ও বে-আইনি কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কাজের পুনরাবৃত্তি না ঘটতে পারে সেজন্য নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

জনবল সঙ্কটে ফায়ার সার্ভিস

আহমেদ নাজমীন সুলতানার প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগের চলমান স্টেশনগুলোতে বর্তমানে জনবলের ঘাটতি হচ্ছে ৪৯৬ জন। ঘাটতি জনবলের পদ সৃষ্টির একটি প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেলে যথাযথ বিধি-বিধান অনুযায়ী জনবল নিয়োগ করা হবে।

একই বিষয়ে শাহ জিকরুল আহমেদের অপর একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দেশের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা সদর ও স্থানে ১৫৬টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

তহুরা আলীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, পুলিশ বিভাগের অতিজরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ১০১টি থানা ভবন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এডিপি’র অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।একনেক সভায় ডিপিপি অনুমোদিত হয়েছে। বর্তমানে থানা ভবনের স্থাপত্য নকশা ও স্থানিক নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে।

সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সহিংসতা

সাধনা হালদারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, “অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সহিংস ঘটনায় সারাদেশে অল্প সংখ্যক মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক চাপে অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা করতে পারেনি। তারা সবাই ভয়-আতঙ্কে দীর্ঘ পাঁচটি বছর পালিয়ে বেড়িয়েছেন।

যারা মামলা করেছিলেন তাদেরকেও মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের কেউ বিচার পায়নি। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন-২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সারাদেশে ১৫ হাজারের বেশি নির্যাতন ও সহিংস ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে। যাদের সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। কোন ক্ষতিগ্রস্ত বা নির্যাতিত ব্যক্তি মামলা করতে চাইলে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা করা হবে।”

মো. হারুনুর রশিদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আজ পর্যন্ত মাদকাসক্ত লোকের সংখ্যা নিরূপণের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক কোন সার্ভে পরিচালনা করা হয়নি। তবে মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারীদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণের জন্য জরিপ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য পর্যালোচনা করে অনুমান করা হয়, বর্তমানে দেশে প্রায় ৪৬ লাখ মাদক ব্যবহারকারী রয়েছে। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ তরুণ, ৩৪ শতাংশ বেকার, অশিক্ষিত ৪০ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করা ৪৮ শতাংশ। মাদক ব্যবহারকারীদের মধ্যে শূণ্য ৭ শতাংশ সূচের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে।

তিনি আরো জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চার খাল এক হাজার ২২১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৩৩ হাজার ২২৫টি। একই সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে তিন হাজার ৭০২টি মামলায় তিন হাজার ৯৫৭ জন মাদক অপরাধীকে গ্রেফতার করে তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর