‘প্রযুক্তির সুফল মানুষের হাতে পৌঁছে দিন’

‘প্রযুক্তির সুফল মানুষের হাতে পৌঁছে দিন’

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “জনগণ আপনাদের কাছে নতুন নতুন উদ্ভাবন চায়, যা তাদের অগ্রযাত্রায় কাজে লাগবে।”

সরকার প্রধান বলেন, দেশবাসীর কী প্রয়োজন, আন্তর্জাতিক বাজারে কিসের চাহিদা বেশি- সেসব বিষয়েও নজর দিতে হবে গবেষকদের।

“আমাদের সরকার সব সময় আপনাদের পাশে আছে। গবেষণার কাজে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণার জন্য শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, বিশেষ অনুদান ও এনএসটি ফেলোশিপের চেক প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

বিজ্ঞানী ও গবেষকরা তাদের শ্রম ও মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন বলে অনুষ্ঠানে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের যেসব দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশে ভাল করছে তারাই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বাংলাদেশেও লাগসই গবেষণাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

বিজ্ঞানী, গবেষকসহ সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে ২০২১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ, প্রযুক্তি-নির্ভর, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় সহায়তা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবার সাতশ’ ফেলো এবং ২৩৬ জন বিজ্ঞানীকে মনোনীত করেছে।

এর মধ্যে গবেষণায় গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুল মান্নান আকন্দ, বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের জেরিন সুলতানা মুনিয়া এবং এনএসটি পেলোশিপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিভাগের সাবিয়া সুলতানাসহ নয়জনের হাতে চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “সবার হাতে এই চেক তুলে দিতে পারলে আমি খুশি হতাম।”

১৯৭৩ সালে বিসিএসআইআর প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বিজ্ঞান গবেষণায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করালাম, তখন দেখলাম গবেষণার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই।”

শেখ হাসিনা জানান, তার সরকার ওই সময় ১২ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দিয়ে গবেষণার জন্য ফেলোশিপ ও অনুদান চালু করলেও পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তা বন্ধ করে দেয়।

“এতে অনেক গবেষক মাঝপথে গবেষণা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের বিজ্ঞানভিত্তিক অগ্রযাত্রা।”

দেশের নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতেও গবেষণার ওপর গুরুত দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় লাগসই কৌশল উদ্ভাবনে গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকেও সেভাবে গড়ে তুলতে বলেন তিনি।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে দেশে শিক্ষার হার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে নেমে এসেছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সভ্য জগতে লেখাপড়ার প্রতি অবহেলা করা হয়? সাক্ষরতার হার কমে যায়? এটা আমার জানা ছিল না।”

মানব সম্পদ উন্নয়নে বর্তমান সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা মাধ্যমিক পর্যায়ে আইটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছি। প্রতিটি স্কুলে কম্পিউটার দিচ্ছি। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করেছি। আইটি ল্যাব স্থাপন করেছি।”

পাটের জিন বিন্যাস উন্মোচনে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সাফল্যের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের বিজ্ঞানীরা পাটের ছত্রাকের জেনোম সিকোয়েন্সও উদ্ভাবন করেছেন, যা পাটসহ অন্যন্য ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।”

বর্তমান সরকারের সময়ে ধানসহ কৃষি গবেষণায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত অর্থবছর সবজি রফতানি করেই ৪০ কোটি ডলার আয় হয়েছে।

“এখন সারা বছরই সব সবজি পাওয়া যায়। এগুলো গবেষণার ফসল”, বলেন তিনি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব রফিকুল ইসলাম।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম সায়েদুল হক চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ