প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনজীবনে প্রমত্তা যমুনার বিপুলতা ফিরিয়ে আনতে আজ শিবালয়ে পুরাতন আরিচা ঘাট পয়েন্টে সঙ্কুচিত এই নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থার কেনা নতুন আধুনিক ৩টি ড্রেজারের কার্যক্রমও উদ্বোধন করেন।
দেশের বড় বড় নদীর নাব্যতা পুনরুদ্ধার, নিষ্কাশন মতা বৃদ্ধি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং নদীর তীর ও ভাঙ্গন প্রতিরোধ পরিকল্পনার আওতায় যমুনা নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হলো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এই ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এতে সিরাজগঞ্জ হার্ড থেকে ধলেশ্বরী নদীর মোহনা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এবং ভুয়াপুর-তারাকান্দি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন নলিনীবাজার এলাকায় ২ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ে ৬৮৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এ ছাড়া বিআইডাব্লিউটিএ’র ৩টি ড্রেজিং কেনার ব্যয় ১৯২ কোটি ১০ লাখ টাকা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় শেখ হাসিনা বলেন, দুই পর্বে ৫৩টি নদী ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় আনা হবে। প্রথম পর্বে ২৪টি নৌপথ খনন করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে ১২টি নৌপথ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৬টি নৌপথ উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে খনন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত ৯৫ শতাংশ নদীর অববাহিকা হচ্ছে দেশের সীমান্তের বাইরে। এ জন্য আমরা নদীর গতিপথ পুনরুদ্ধার নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও নদী তীর সংরক্ষণে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় প্রায় ১ হাজার ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ক্যাপিটাল (পাইলট) ড্রেজিং অব রিভার সিস্টেম ইন বাংলদেশ’ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কনসালটিং ফার্মের মাধ্যমে বাংলাদেশে টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এক সমীক্ষা পরিচালিত হবে। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে ড্রেজিং মডিউলসহ প্রধান প্রধান নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য ১৫ বছর মেয়াদী মাদার প্লান চূড়ান্ত করা হবে বলে।
শেখ হাসিনা বলেন, এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধু বহুমুখি সেতুর পশ্চিমের গাইড বাঁধ হুমকি মুক্ত করতে এ দু’টি স্থানে ২২ কিলোমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও সংরক্ষণ কাজ পরিচালিত হবে। ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে নদীর তীরবর্তী এলাকা ভরাট করে বিদ্যমান শিল্পপার্কের আয়তন বাড়ানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চন্দনা-বারাসিয়া নদী পুন:খনন, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার, কালনী-কুশিয়ারা নদী খনন এবং গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ড্রেজার স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কোন সরকারই ড্রেজিংয়ের জন্য ড্রেজার কেনার উদ্যোগ নেয়নি। নৌপথের নাব্যতা পুনরুদ্ধারে কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধু ৭টি ড্রেজার কিনেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ৩টি ড্রেজার কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অবহেলার কারণে এসব ড্রেজার কেনা হয়নি।
তিনি বলেন, বর্তমান মেয়াদে তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ৩টি ড্রেজার কিনেছে এবং আরও ১০টি ড্রেজার, প্রয়োজনীয় নৌযান ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতীয় আর্থিক সহায়তায় বিআইডব্লিউটিএ তিনটি ড্রেজার কিনবে। এছাড়া কুয়েত সরকার উপহার হিসেবে ৪টি ড্রেজার দেবে। এগুলো খুব শিগগিরই দেশে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানী ১৭টি ড্রেজার আমদানী করেছে এবং এগুলো নদী খননের জন্য ইতিমধ্যে চুক্তিতে দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নদী-তীরবর্তী সকল অবৈধ দখলকৃত জমি পুনরুদ্ধারে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার দ্বিধা করবে না।
তিনি বলেন, নদীগুলোর উভয় পাশে পায়ে চলা পথ তৈরি করা হবে এবং বাকি জমি বৃক্ষ রোপণ ও অন্যান্য বিনোদনমূলক কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।
স্থানীয় এমপি’র দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী পাটুরিয়া ঘাটে ১৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনেরও আশ্বাস প্রদান করেন।
পরে তিনি ডিজিটাল পদ্ধতিতে যমুনা নদীর খনন কাজের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এবিএম আনোয়ারুল হক।
এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও নৌমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরীও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।