ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়া আমাদের নীতি নয়। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমাদের সরকারের সময় ৬ হাজারেরও বেশি নির্বাচন হয়েছে। কোনো নির্বাচনেই কোনো সমস্যা হয়নি। কেউ কোনো ধরনের অনিয়মের কথাও বলতে পারেননি।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ মতবিনিময় সভা শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনা তার সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপ-নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী হেরেছেন। এর আগে হবিগঞ্জের উপ-নির্বাচনেও আমাদের প্রার্থী হেরেছেন। জনগণ ভোট দেয়নি, তাই তারা জিততে পারেননি। জনগণ যাকে চাইবে, তাকেই ভোট দেবে- এটাই আমরা বিশ্বাস করি।’’
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘‘আমরা সাংবিধানিক অধিকার, ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করি। এসব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা সেটাই প্রমাণ করেছি।’’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘দেশের জনগণ কখনো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখেনি। নির্বাচন মানে মারামারি কাটাকাটি। একমাত্র আমরাই ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সরকারের সময় ছয় হাজারের বেশি নির্বাচন হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, উপ-নির্বাচন প্রতিটি নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি।’’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপ-নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী হেরেছে। আমরা ভোট কাটতে যাইনি। ভোট কেটে নেওয়া আমাদের নীতি না।’’
প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের উন্নয়ন এবং বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাস, দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘‘বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাষ্ট্রে পরিণত করে। প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া) ও তার ছেলেরা লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করে।’’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘একজন প্রধানমন্ত্রী কীভাবে কালো টাকা বানাতে পারে, এতিমের টাকা মেরে খেতে পারে!’’
তিনি বলেন, ‘‘দেশে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো ঠাঁই নেই। আমরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।’’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মিলিটারি ডিকটেটর জিয়াউর রহমান সামরিক আইন করে নিজেকে সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের নানাভাবে পুরস্কৃত করেন। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সংসদে বসান। সেই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ করেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশ ভবিষ্যতে যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যেতে পারে সে দিকে লক্ষ্য রেখেই সংবিধান সংশোধন করেছি।’’
প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘‘আমরা গ্রামের অর্থনীতি চাঙ্গা করেছি। গ্রামের মানুষের উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করে যাচ্ছি।’’
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনারা সংগঠনকে শক্তিশালী করুন। সংগঠনকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে হবে।’’
মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সতীশ চন্দ্র রায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহউদ্দিন সিরাজ উপস্থিত রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের কর্মকর্তা ও সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জাতীয় কমিটির সদস্য, জেলায় নির্বাচিত দলের জাতীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের প্রশাসক, সকল উপজেলা, থানা, পৌর ও ইউনিয়ন শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দল সমর্থিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের জেলা ও উপজেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নিচ্ছেন।