চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটের অদূরে খাজা রোডে মোড়ে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙ্গে পড়ে ৮ জন নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার রাত পৌনে ৮টায় এ ঘটনায় ঘটেছে। এখনো ভাঙ্গা গার্ডারের নীচে চাপা পড়ে আছে বেশ কয়েকজন। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্লাইওভার নির্মাণ সামগ্রীতে আগুন ধরিয়ে দিলে পুলিশের সঙ্গে জনতার সংর্ঘষ বেধে যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বহদ্দরহাট পুলিশ বঙে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারটির ১৩০ ফুট দীর্ঘ কংক্রিটের গার্ডারটি ভেঙে পড়েছে দ্বিতীয় বারের মতো। এর আগে চলতি বছরের ৩০ জুন শুক্রবার দুপুরে গার্ডারে একাংশ ভেঙ্গে পড়েছিল।
প্রতক্ষ্যর্দশীরা জানান, রাত পৌনে ৮টার দিকে বহদ্দারহাটস্থ খাজা রোড়ের মোড়ে হঠাৎ সিডিএর নির্মাণাধীন ফ্লাইগার্ডারের একটি গার্ডার ভেঙে পড়ে জনবহুল রাস্তার ওপর। ফ্লাইওভারের ঐ অংশে যানবাহন চলচল বন্ধ থাকায় কোনো যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও বিপুল সংখ্যক পথচারী বিশাল গার্ডারের ভাঙা অংশে চাপা পড়েছে। এ ঘটনার পর পরই ঐ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ ওই এলাকার শত শত মানুষ উদ্ধার কাজ করছে।
ঘটনাস্থল থেকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত ৫ জন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত অনেককে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীর নামে স্থানীয় এককজন দোকানদার জানান, ফ্লাইওভারের নিচে প্রতিদিনের মতো সবজি বিক্রেতারা তাদের কাঁচা তরকারি বিক্রির জন্য বসেছিলেন। দুর্ঘটনায় এসব সবজি বিক্রেতারা হতাহত হন।
পুলিশ রাত সাড়ে ৯টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ ৫ জন মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও স্থানীয়রা জানান নিহতের সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ জন পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে পারে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের দুর্ঘটনার পর এ পর্যন্ত নাজমা (২৬) নামে এক মহিলাসহ ১০ জনকে জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে বহু লোক হতাহত হয়েছে মর্মে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা ফ্লাইওভার-নির্মাণ শ্রমিকদের থাকার জন্য অস্থায়ীভাবে তৈরি করা ছাউনিতে আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি গাড়ি। পুলিশ ও ফায়ার কর্মীরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন।
উল্লেখ্য চলতি বছরের ২৯ জুন বহদ্দারহাটের কাছে আরো একবার ফ্লাইওভারের একটি গার্ডার ভেঙ্গে পড়েছিল। সেদিন শুক্রবার থাকায় দুপুরে লোক চলাচল কম থাকায় একজন রিঙা চালক আহত ছাড়া কেউ হতাহত হয়নি।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণে বহদ্দারহাট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হলে আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। গার্ডার ভেঙে পড়ার ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কিছু লোককে জড়ো হয়ে বিক্ষোভও করতে দেখা যায়।
চান্দগাঁও থানার ওসি বাবুল চন্দ্র বণিক বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের সঙ্গে কঙবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে যানবাহন চলাচল সাময়িক বিঘ্নিত হয় এবং যানবাহন আটকা পড়ে।
সিডিএর তত্ত্বাবধানে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখে হাসিনা ২০০৯ সালের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ পাঁচটি ফ্লাইওভারের ভিত্তি প্রাস্তর স্থাপন করেছিলেন।
১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভারের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি টাকা। সিডিএর নিজস্ব তহবিল থেকে এ অর্থ দেয়া হচ্ছে।
জানাগেছে, পারিশা এন্টারপ্রাইজ ও মীর আক্তার এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ করছে।