শেয়ারবাজারে ভোগান্তির আরেক নাম ওডলট মার্কেট। আইন সম্মতভাবে এ মার্কেটের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও পরিস্থিতির কারণে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তির এ মার্কেট। অধিকাংশ কোম্পানির বোনাস লভ্যাংশ লট পূরণে সহায়ক না হওয়ায় অডলটের শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এর সমাধান কামনা করা হলেও ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীদের ডাকে সাড়া দেয়নি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো রেগুলেটর প্রতিষ্ঠানই।
ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা জানান, অধিকাংশ কোম্পানি বছর শেষে যে স্টক ডিভিডেন্ড দেয় তা এক লটও হয়না আবার অর্ধেকও হয় না। কোনো কোম্পানি যদি ১২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয় তবে ওই কোম্পানির শেয়ার একলট (১০০টি শেয়ারে লট হিসাবে) করতে আরো ৮৮টি শেয়ারের প্রয়োজন। আর মূল বাজারে সাধারণত সর্বনিম্ম এক লট ছাড়া ক্রয় বিক্রয় হয় না। ফলে ওই কোম্পানির শেয়ার একলট করতে আরো ৮৮টি শেয়ার কিনতে হবে অথবা ১২টি বোনাস শেয়ার বিক্রি করতে হবে। লভ্যাংশ পাওয়া কোনো বিনিয়োগকারী যদি ১০০টি শেয়ার পূরণ করতে চান তাহলে তাকে ১২টি শেয়ার পাওয়া ৭জন বিনিয়োগকারীর দারস্থ হতে হবে। এতে করে তিনি আরো ৮৪টি শেয়ার কিনতে পারবেন। কিন্তু তার দরকার আরো ৪টি শেয়ার। আর এই ৪টি শেয়ার কিনতে আবারো তাকে অডলট মার্কেটের দিকে ঝুঁকতে হবে।
ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, এতো ভোগান্তির পরও অডলট মার্কেটে রয়েছে এক শ্রেনীর সংঘবদ্ধ চক্র। তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অডলটের শেয়ার কম দরে কিনে বেশি দরে বিক্রি করে। অর্থাৎ কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারী যদি অডলটের শেয়ার কিনতে যান তাহলে তাকে বেশি দর দিয়ে কিনতে হবে। আর বিক্রি করতে গেলে কম দরে বিক্রি করতে হবে।
সিনহা সিকিউরিটিজ হাউজের বিনিয়োগকারী শেখ আশরাফ অভিযোগ করে বলেন, ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য কোম্পানিতে বিনিয়োগ করি। ওই কোম্পানি বছর শেষে যে স্টক লভ্যাংশ দেয় তা কোনোভাবে একলট করা যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে বাজার সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরদের সৃষ্টি করা অডলট মার্কেটে যেতে হয়। যেখানে প্রাপ্য বোনাস শেয়ার বিক্রি করতে গেলে মূল বাজারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি করতে হয়। আবার কিনতে গেলে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়। যা এক ধরনের হয়রানি ছাড়া কিছুই না।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি, ভোগান্তি কমাতে মূল মার্কেটে অডলটের শেয়ার কেনা বেচার পদ্ধতি চালু করা হোক অথবা লট প্রথা ভেঙ্গে দেয়া হোক। কিন্তু এতে কর্ণপাত করেন না রেগুলেটররা। ফলে অডলটের ভোগান্তি আর কতদিন চলবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
এ বিষয়ে সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেডের অ্যাসিসেস্টন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আলমগীর হোসেন বলেন, বিশ্বের কোনো দেশের শেয়ারবাজারে অডলট নামে কোনো মার্কেট নেই। তবে আমাদের এখানে রয়েছে। কোম্পানির বোনাস অডলট শেয়ার বিক্রি করতে গেলে কম দরে এবং কিনতে গেলে বেশি দরে কিনতে হয়। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে এবং বিড়ম্বনা দূর করতে তাদের অডলটের শেয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কিনে নেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে বিডি ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ হাউজের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ারনিউজ২৪ ডটকমকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের লটবিহীন বোনাস শেয়ার কেনাবেচার জন্য আলাদা কোনো মার্কেট থাকা উচিত নয়। এ সব শেয়ারের লেনদেন মূল বাজারে হলে বাঁধা কোথায়। বিষয়টি রেগুলেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেবে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।