স্টক এক্সচেঞ্জের অধীনে আসছে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট

স্টক এক্সচেঞ্জের অধীনে আসছে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট

শেয়ার কেনাবেচার নিষ্পত্তিকালীন সময় কমানো এবং লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পৃথক ‘ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট’ কোম্পানি গঠনের দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জের অধীনে ছেড়ে দেওয়া হবে।

সম্প্রতি দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)-এর এক বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।

সূত্রমতে, বাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ারের সুষম ব্যবস্থাপনা এবং টাকার সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে এসইসি। শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

প্রসঙ্গত: ইতোপূর্বে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই)-এর পক্ষ থেকে পৃথক ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব দেওয়‍া হলেও তা আমলে নেয়নি এসইসি।

সূত্রমতে, প্রাথমিকভাবে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণেই রাখা হবে এমন চিন্তা করা হয়েছিল। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বোম্বে স্টক একচেঞ্জ, সিঙ্গাপুর স্টক একচেঞ্জসহ বিশ্বের বৃহৎ স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে বেসরকারি খাতে এ ধরনের ক্লিয়ারিং কোম্পানি রয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্টক এক্সচেঞ্জের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এটা দেখে পরবর্তীতে এ ভাবনা থেকে সরে এসেছে এসইসি।

জানা যায়, স্টক এক্সচেঞ্জে নির্দিষ্ট দরে শেয়ার কেনাবেচায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে সম্মত হলে ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি ওই শেয়ার কেনাবেচা সম্পন্ন করার দায়িত্ব পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্রেতার পক্ষে অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তার পাশাপাশি বিক্রেতাকেও তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। এর ফলে শেয়ার লেনদেন অনিষ্পত্তি থাকার সম্ভাবনা থাকে না। এছাড়া পৃথক স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে শেয়ার কেনাবেচা সম্পন্ন করতেও এ ধরনের কোম্পানি কাজ করে থাকে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) যেহেতু বেসরকারি, সেহেতু ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোম্পানিও বেসরকারি খাতে থাকা উচিত। সরকার বা তদারকি কর্তৃপক্ষ সরাসরি ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হয়ে বরং তদারকি জোরদার করলেই বাজারে স্বচ্ছতা ও আস্থা বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

ডিএসই’র সভাপতি রকিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে ‘বাংলানিউজ’-কে বলেন, “ইতোমধ্যেই আমরা পৃথক ক্লিয়ারিং কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং ডিএসই পরিচালনা পর্ষদও এতে সম্মতি দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “এ কোম্পানির নাম ‘ক্লিয়ারিং এবং সেটেলমেন্ট কোম্পানি’ রাখা যেতে পারে। এছাড়া আমরা পৃথক ক্লিয়ারিং কোম্পানি গঠনেরও চিন্তা করছি। সুতরাং দুই স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য এ ধরনের দুটি পৃথক কোম্পানি গঠনে আমাদের আপত্তি নেই” বলে জানান তিনি।

সিএসই’র সভাপতি আল মারুফ খান বলেন, “শেয়ার কেনাবেচায় নিষ্পত্তিকালীন সময় কমানো এবং লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পৃথক ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠন করা প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি এসইসি’র সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা এসইসিকে বলেছি যে, বেসরকারি খাতের ওপর ছেড়ে দিলে এ কোম্পানির গঠন এবং ব্যবস্থাপনার কাজটি সাবলীল হবে। পাশপাশি কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়াও দ্রুত হবে। এ প্রেক্ষিতে এসইসি ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠনের বিষয়টি আমাদের উপর অর্থাৎ স্টক এক্সচেঞ্জের অধীনে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চিন্তাভাবনা করছে” বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গক্রমে মারুফ খান আরো বলেন, “কাগুজে শেয়ারকে ইলেক্ট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর এবং অনলাইন শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ সৃষ্টিতে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি যেভাবে গঠন করা হয়েছিল সেভাবেই সেন্ট্রাল ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট কোম্পানি গঠন করা হতে পারে। আর এক্ষেত্রে সিএসই মূল উদ্যোক্তা হতে চায়।”

অর্থ বাণিজ্য