প্রথম বছরেই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পদ্মা লাইফ

প্রথম বছরেই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পদ্মা লাইফ

ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। রক্ষকরা ভক্ষক হবার কারণে আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে এ কোম্পানির। যে কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই অর্থাৎ ২০১১ সালের জন্য বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়া হয়নি। এজন্য শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটি চলে গেছে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে।

জানা গেছে, পদ্মা ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান ড. এ.বি.এম জাফর উল্লাহ, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জাফর, কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম রাব্বানী, ডিএমডি বদরুজ্জামান বাদল অবৈধভাবে ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০ সালে কোম্পানি থেকে বিপুল অংকের টাকা তুলে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে শেয়ারনিউজ২৪ডটকমে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখে এবং অক্টোবর মাসের ১, ২ ও ৩ তারিখে ধারাবাহিকভাবে ৫টি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এদিকে পদ্মা ইসলামী লাইফের একটি সূত্র জানায়, ২০০৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানি থেকে বিপুল অংকের টাকা তুলে নেয়ায় ২০১১ সালের হিসাববর্ষে তার প্রভাব পড়ে। ফলে ২০১১ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ইসলামী লাইফ ১০ টাকা ফেস ভ্যালুতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় চলতি বছরের এপ্রিলে। এরপর কয়েক কার্যদিবসের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর ১৬০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে জুলাই মাসে কোম্পানিটি ২০১১ সালের জন্য শেয়ারহোল্ডাদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না এমন ঘোষণা আসলে ৬০ টাকায় নেমে আসে এ শেয়ারের দর।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে যে প্রসপেক্টাস জমা দেয় তাতে বিভিন্ন তথ্য গোপন ও অনিয়ম করা হয়। এ বিষয়ে এসইসির চেয়ারম্যানের কাছে একাধিবার অভিযোগপত্র জমা দেন জীবন বীমা করপোরেশনের সাবেক এক এমডি।

এ সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে শুনানীতে তলব করে। তবে অদৃশ্য কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়েও  ধারাবাহিকভাবে ৪টি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানির পারফমেন্স কেমন হবে তার সিংহভাগ নির্ভর করে পরিচালনা পর্ষদের ওপর। পরিচালনা পর্ষদে সৎ ও যোগ্য লোক থাকলে কোম্পানি ভালো পারফমেন্স করবে। বিপরীত অবস্থায় কোম্পানির পারফমেন্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ডিএসই সভাপতি রকিবুর রহমানের মতে, কোনো কোম্পানির সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে কোম্পানির দায়িত্বে কারা আছেন অর্থাৎ পরিচালনা পর্ষদের ওপর। যদি কোম্পানিতে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি থাকেন তাহলে কোম্পানিটি খারাপ অবস্থানে থাকলেও তারা ভালো অবস্থানে নিয়ে যান। আর অসৎ ও অযোগ্য ব্যক্তিরা দায়িত্বে থাকলে কোম্পানির অবস্থা যত ভালোই হোক না কেন তাদের দুর্নীতির কারণে কোম্পানি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়।

তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে চলে যাওয়ার বিষয়ে পদ্মা ইসলামী লাইফের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জাফরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ারনিউজ২৪ডটকমকে বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় পরিশোধিত মূলধন নতুন করে ২০ কোটি টাকার মতো বাড়িয়ে ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ফলে প্রথম বছর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। পরিচালকদের দুর্নীতি কারণে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পদ্মা ইসলামী লাইফের স্থান হয়েছে এ অভিযোগ ঠিক না। কারণ পরিচালকদের দুর্নীতির বিষয়ে যে অভিযোগ আছে তা ২০১০ সালের। আর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ২০১২ সালে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরিচালকদের দুর্নীতি নয়, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেয়ার পেছনে অন্য কারণ আছে। কারণটি কি এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি আপনাদের কোনো তথ্য জানাতে বাধ্য নই। আমি পরিচালকদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারি না।

অর্থ বাণিজ্য