ক্রিকেট মাঠের ২২ গজে ১০৮ বলে ১৩ চার ও তিন ছয়ে তিনি ১০০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঘা বাঘা সব বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে। সেই ছেলে দেশের পরিচিত সাংবাদিকদের সামনে এসে গুটিয়ে গেলেন। ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনের সেশনটা সামলাতে তার নার্ভাস লাগছিলো,‘মিডিয়ার যে এত প্রেসার এটা আমি জীবনেও বুঝিনি।’
আসলে টেস্টের মতো মিডিয়াতেও আবুল হাসানের অভিষেক হয়েছে বুধবার। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তাকে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। তার বেশির ভাগই এক দুই লাইনে শেষ করেছেন। পাশে বসা মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমামের সাহায্যও নিয়েছেন হয়েছে মাঝে মাঝে। তার সংক্ষিপ্ত উত্তরগুলো তুলে ধরা হলো বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।
প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ে যাওয়ার সময় কি মনে হচ্ছিলো?
হাসান: আসলে তেমন কিছু না। একজন ব্যাটসম্যান মনে করে ব্যাটিংয়ে গিয়েছি। ব্যাটসম্যানের মতোই খেলার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) কী বলেছিলেন?
হাসান: রিয়াদ ভাই বলেছিলেন যে, ‘তুই যখন ব্যাটিং করবি, ব্যাটসম্যানের মতো করেই করবি।’ আর আমি যখন বাংলাদেশের হয়ে অনুর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেটে খেলতাম, ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলতাম। এরপরে পেস বোলার হয়ে গেছি। রিয়াদ ভাই ইনিংসটা লম্বা করতে বলেছিলেন।
প্রশ্ন: অভিষেকে ব্যাটিংয়ে এমন কিছু হতে পারে কখনও ভেবেছিলেন?
হাসান: ব্যাটিং ভালো করেছি। আমার মূল লক্ষ্য বোলিং। বোলিংটা ভালো করতে পারলেই আমি খুশি।
প্রশ্ন: কখন জানলেন আপনি টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন?
হাসান: কাল রাতে জানতে পারি যে খেলব। আমাকে কোচ বলেছিলেন প্রস্তুত থাকতে। পরের ম্যাচ খেলতে পারি, শুধু এটুকুই বলেছিলেন। তবে নিশ্চিত করেননি। মুশফিক ভাই বলেছেন যে, আমি খেলবো।
প্রশ্ন: কোন চাপ ছিলো?
হাসান: একটু চাপে ছিলাম। বড় ম্যাচ তাও আবার ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
প্রশ্ন: ৯৭ রানে নার্ভাসনেস কাজ করেছে?
হাসান: নার্ভাসনেস তো একটু থাকবেই। আমি আমার অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করতে যাচ্ছি, একটু চাপ তো থাকবেই।
প্রশ্ন: কাল (বৃহস্পতিবার) প্রথম সেশনে লক্ষ্য কি?
হাসান: রিয়াদ ভাইকে সাপোর্ট করবো। এটাই।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দল কি এখন ভালো অবস্থানে?
হাসান: অবশ্যই আমরা ভালো পজিশনে আছি। আমি যেটা মনে করি, আমাদের বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যদি ইনশাল্লাহ একটু ভালো ব্যাটিং করতে পারে, তাহলে ভালো হবে।
প্রশ্ন: কখন ভাবলেন সেঞ্চুরি সম্ভব?
হাসান: আমার যখন ৭০ পার হয়ে গেছে, তখন থেকেই মনে হচ্ছিল ইনশাল্লাহ কিছু একটা করবো।
প্রশ্ন: সেঞ্চুরির পর উদযাপন? ব্যাট পড়ে গেল। কী হচ্ছিল মনের ভেতর?
হাসান: (হাসি) তখন কী হচ্ছিল আসলে কিছু বলতে পারবো না। কিছু মনে নেই।
প্রশ্ন: সিলেট থেকে উঠে আসার পেছনে যাঁদের অবদান তাদের সম্পর্কে বলবেন?
হাসান: প্রথমত আমার আব্বু। ওনার অনেক ইচ্ছে ছিল, আমাকে আজ এ পর্যায়ে খেলতে দেখার। কিন্তু আজ আব্বু নেই। আরো অনেকেই আছে। মৌলভীবাজারের জেলা কোচ রাসেল, বিভাগীয় কোচ ইমন ভাই…তাঁরা অনেক কিছু করেছেন আমার জন্য।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাল্লেকেলেতে ক্যাচ ফেলেছিলেন, সেটা কি মনে আছে?
হাসান: বিশ্বকাপ খেলে আসার পর খারাপ লেগেছে। মনে হয়েছে আমি ক্যাচ ফেলার জন্যই হয়ত আমার দল কিছু করতে পারেনি। তবে সবাই আমাকে বুঝিয়েছেন, ‘এটা পার্ট অব গেম।’ যে কোন সময় যে কোন কিছু হতে পারে।
প্রশ্ন: দিনের সেরা শট কোনটি?
হাসান: পেরমলকে মারা ছক্কাটা যেটা ফিফটির পরে মেরেছি।
প্রশ্ন: ক্রিস গেইল কী বলেছিলেন?
হাসান: উৎসাহ দিলেন। বললেন ভালো ব্যাটিং করেছি। এরপর আমার ব্যাটের নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম ‘ইংলিশ ব্যাট’।
প্রশ্ন: কে দিয়েছে ব্যাট?
হাসান: তামিম ভাইয়ের ব্যাট এটা। উনি আমাকে দিয়েছিলেন। ওইটা আমি তামিম ভাইকে দিয়ে আনিয়েছি।
প্রশ্ন: পেস বোলার হলেন কী কারণে?
হাসান: একটা ম্যাচে ভালো বোলিং করেছিলাম। তখন নান্নু স্যার ও নোবেল স্যার বললেন, তুই পেস বোলিং কর। ব্যস হয়ে গেল।