টেস্ট ক্যাপ পড়িয়ে দেওয়ার সময় অধিনায়কও হয়তো ভাবেননি আবুলের হাতে তাদের মুক্তি লেখা আছে। একের পর এক উইকেট হারিয়ে টালমাটাল দলকে শেষপর্যন্ত অভিষিক্ত আবুল হাসানই স্বস্তি এনে দিলেন। আবুল-মাহমুদউল্লাহ’র নবম উইকেট জুটি দেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রানও করেছেন। টেস্টে অভিষেকে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে শতকও পেলেন, কাটায় কাটায় ১০০ রান অপরাজিত। অপর অপরাজিত ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ’র সংগ্রহে ৭২ রান।
বাংলাদেশ ইনিংস: ৩৬৫/৮ (৮৬ ওভার) আবুল হাসান ১০০*, মাহমুদউল্লাহ ৭২*
সিলেটের এই ক্রিকেটারের আগে অভিষেক টেস্টে শতক পেয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে বুলবুল ১৪৫ রানের ইনিংস খেলেছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে, ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। মোহাম্মদ আশারাফুল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১৪ রান করেন, কলম্বোতে।
দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন আবুল। ১৮৮৪ সালে ইংল্যান্ডের উইলিয়াম রিডার দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১১৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ১৬তম টেস্টের সেই কীর্তি ১২৮ বছর ধরে টিকে আছে। ওই রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারেন ২০৬০তম টেস্টে খেলা বাংলাদেশের আবুল। কারণ তিনি এখনও অপরাজিত।
নবম উইকেট জুটিতেও একটি বিশ্ব রেকর্ডের হাতছানি বাংলাদেশের। এই জুটি ১৯৬ রানে যেতে পারলেই ২৪ বছর আগে গড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বাউচার এবং সিমকক্সকে পেছনে ফেলে মাহমুদউল্লাহ এবং আবুল হিরো বনে যাবেন। যদিও এই জুটি অপরাজিত ১৭২ রান তুলে এরই মধ্যে চতুর্থ সেরা হয়ে গেছে।
শেষ সেশনটা বাদ দিলে পুরো দিনটা কি বাজেই না গেছে বাংলাদেশ দলের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গতিরবলে খেলতে গিয়ে মুশফিকরা একের পর এক উইকেট ছুড়ে এসেছেন। ফিদেল এডওয়ার্ডস, ড্যারেন স্যামি এবং টিনো বেস্টের বলে তাদের শরীর ক্ষতবিক্ষত না হলেও উইকেট দিয়ে আসার যন্ত্রণায় রক্তক্ষরণ হয়েছেন।
ক্যারিবীয় দ্রুতগতির বোলাররা শক্তির চেয়েও লাইন-লেন্থ ধরে বল করেছেন। ওভারে যে একটি দুটি বল লাফিয়েছে, সেগুলো খেলতে না পেরে আউট হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। কেউ কেউ তো বলের গতিপ্রকৃতিও বুঝতে পারেননি। তামিম ইকবাল যেমন স্যামির বল ছাড়তে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। বাঁহাতি এই ওপেনারের কল্পনাতেও আসেনি বল অফ-সাইডে পড়ে ভেতরে ঢুকবে।
তামিম একা নন, ওপেনার নাজিমউদ্দিনের আউট নিয়ে কি বলবেন। তিনিও তো উইকেট দিয়ে এসেছেন এডওয়ার্ডসকে। শটপিচ ডেলিভারি হলেও বল খুব লাফায়নি। একটু যত্নসহকারে খেললে শট লেগে ক্যাচ না হয়ে বল চলে যেতে পারতো সীমানার দিকে।
প্রধান কোচ শেন জার্গেনসেন শাহরিয়ার নাফীসকে পই পই করে বুঝিয়েছেন পেসারদের একটু সমঝে খেলার জন্য। মঙ্গলবার দলীয় বৈঠকেও তাকে বলা হয়েছে পরিস্থিতি বুঝে শট নিতে। ভালো শুরু পেলে লম্বা ইনিংস খেলারও নির্দেশ ছিলো। কিন্তু শাহরিয়ার ক্রিজে এসে ওসব ভুলে বসে আছেন। স্যামির অফ সাইডের বলে খোঁচা দিয়ে ক্যাচ হয়েছেন উইকেটের পেছনে, ২৬ রানে।
এডওয়ার্ডসের বল ব্যাটের ভেতরে কানায় লাগিয়ে বোল্ড নাঈম ইসলাম। সাকিব আল হাসান ছাড়ার বলে ব্যাট নিয়ে দিনেশ রামদিনের হাতে ক্যাচ। কেবল পেরমল নাসিরকে আউট হতে বাধ্য করেন ৫২ রানে। মুশফিকুর রহিমও ৩৮ রানে উইকেট দিয়েছেন এডওয়ার্ডসকে।
দিন শেষে ক্যারিবীয়ান পেসার এডওয়ার্ডস সফল বোলার। আর বাংলাদেশের আবুল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ সফলতম ব্যাটসম্যান। আট জনে যা পারেননি নবম উইকেটে তারা তারচেয়েও অনেক বেশি কিছু করেছেন।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, নাজিমউদ্দিন, শাহরিয়ার নাফীস, নাঈম ইসলাম, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), নাসির হোসেন, মাহমুদউল্লাহ (সহ-অধিনায়ক), সোহাগ গাজী, রুবেল হোসেন ও আবুল হাসান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: ক্রিস গেইল, কাইরান পাওয়েল, শিবনারায়ন চন্দ্ররপল, ড্যারেন ব্রাবো, দিনেশ রামদিন, ড্যারেন স্যামি, সুনিল নারিন, বিরাসামি পেরমল, ফিদেল এডওয়ার্ডস, টিনো বেস্ট, মার্লন স্যামুয়েলস।