প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্বে অবহেলাকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আবারও কড়া হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করে বলেছেন, এ ধরনের অপরাধের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ নবনির্মিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ একাডেমিক ভবন উদ্বোধনকালে আরো বলেন, জনগণকে সেবা দিতে সব চিকিৎসককে তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছা দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কে ক্ষমতায় যাবে, আর কে যাবে না- তা জনগণই নির্ধারণ করবে। তবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সেবা করা।’ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে চিকিৎসা গবেষণা সম্প্রসারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে রাজধানীর খিলগাঁও এবং কুর্মিটোলায় ৫শ’ শয্যার দু’টি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ৩৭৫ থেকে ৮৫০-এ উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই হাসপাতালে একটি পূর্ণাঙ্গ ইমার্জেন্সী ও ক্যাজুয়ালটি বিভাগ চালু রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অবহেলিত অঞ্চলে ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং বিগত ৩ বছরে প্রায় ৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে অনুদান দিতে এগিয়ে আসার জন্য বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সম্প্রসারণে অর্থদানের উপর কর রেয়াত সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন। এছাড়া বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী জনগণকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ওয়েব ক্যামেরা, উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে চিকিৎসা পরামর্শের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকার বন্ধ কমিউিনিটি কিনিকগুলো চালু করেছে এবং বর্তমানে সারাদেশে এ ধরনের ১১ হাজার ক্লিনিক চালু রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ ২০১০ সালে জাতিসংঘের এমডিজি-৪ পুরস্কার লাভ করে। অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. মুজিবুর রহমান ফকির ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হুমায়ুন কবির অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। চিকিৎসা সেবা পেশাকে মহৎ পেশা হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও সদাচরণ একজন রোগীর অর্ধেক রোগ উপশম করতে পারে। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা আন্তরিক হলে স্বল্প সুযোগ সুবিধার মাধ্যমেও রোগীদের অধিক সেবা দিতে পারেন। পরে শেখ হাসিনা ঢাকা শিশু হাসপাতালের ১০তলা নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং চাইল্ড কার্ডিয়াক সার্জারি ও কার্ডিয়াক ক্যাথ ল্যাবসহ শিশু হৃদরোগ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং তাদের চিকিৎসাসেবা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। প্রধানমন্ত্রী শিশুদের চিকিৎসায় আরো যতœবান হতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি আশা করি যে, আপনারা নিজের সন্তানের মত স্নেহ ও ভালবাসা দিয়ে বিশেষ করে অসহায় ও দারিদ্র্যসহ শিশুদের চিকিৎসা করবেন। তিনি শিশুদের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, স্বাস্থ্যবান ও নিরোগ জাতি গঠনের চিকিৎসকদের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা দেশের অধিকতর উন্নয়নে সহায়তা করবে। দেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার শিশু হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাইল্ড কার্ডিয়াক সার্জারি ও কার্ডিয়াক ক্যাথ ল্যাব অনাকাক্সিত শিশু মৃত্যু হ্রাসে সহায়ক হবে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার শিশু কল্যাণে জাতীয় শিশুনীতি-২০১১ প্রণয়ন এবং তাদের সেবার জন্য সারাদেশে ৪২টি ডে’কেয়ার সেন্টার চালু করেছে। তিনি স্বাস্থ্য সেবা খাতের উন্নয়নে সরকারের প্রয়াসের পরিপূরক হিসেবে এগিয়ে আসতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সমাজের ধনবানরা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শিশু হাসপাতালকে অন্যতম সেরা হাসপাতাল হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, হাসপাতাল সম্প্রসারণ, শিশু হৃদরোগ বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং গাজীপুর ও রাজশাহীতে নতুন শাখা চালু হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসার মান ও সুযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, প্রতিমন্ত্রী ডা. মুজিবুর রহমান ফকির, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, শিশু হাসপাতালের পরিচালক মনজুর হোসেইন এবং হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বক্তৃতা করেন। |