খুলনার অভিষেক যেন আলোকিত হয়

সোহাগ গাজীর জন্ম খুলনায়, এখানেই খেলা শিখেছেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও তার অভিষেক খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে। পটুয়াখালির ক্রিকেটার হলেও খুলনা তার খুব প্রিয় ভেন্যু। এবারের জাতীয় লীগের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক খুলনার বিপক্ষে হ্যাট্রিক উইকেটও আছে তার। অতএব খুলনা টেস্ট স্মরণীয় করে রাখার একটা পরিকল্পনা  নিশ্চয়ই সোহাগের আছে। পরিকল্পনা মতো খেলতে পারলে অভিষেক টেস্টে নয় উইকেট পাওয়া এই অফ স্পিনার আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান, রুবেল হোসেন, আনামুল হকের হোম ভেন্যু খুলনা। জাতীয় লিগে তারা খুলনার হয়েই খেলেন। এই মাঠে জাতীয় লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে দুর্দান্ত একটি শতকও আছে আনামুলের। সাকিবও ওই ম্যাচে খেলেছেন। বরিশালের অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস জাতীয় লিগের ম্যাচে খেলে গেছেন খুলনার বিপক্ষে। এই মাঠে একটি অর্ধশতকও আছে তার।

তারও আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হাইপারফরমেন্সের বিপক্ষে শাহাদাত হোসেন, নাঈম ইসলাম, শাহরিয়ার এবং আনামুল ছিলেন চারদিনের ম্যাচে। যদিও এখানে তারা সফরকারী বোলারদের বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তারপরেও অভিজ্ঞতাগুলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কাজে লাগাতে পারলে ভালো কিছু হলেও হতে পারে।

২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর স্বীকৃতি পায় আবু নাসের স্টেডিয়াম। শাহরিয়ার ছিলেন ওই দলের অধিনায়ক। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ওয়ানডেও খেলেছে ওই সিরিজে। উভয় ফর্মেটেই জিতেছে বাংলাদেশ। এবার ভিন্ন ফর্মেটের খেলা। প্রতিপক্ষও অনেক শক্তিশালী। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের বিপক্ষে বেশি কিছু আশা করাও ভুল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও অবাস্তব স্বপ্ন দেখছে না। ঢাকা টেস্টের মতো সেশন ধরে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা তাদের। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম সংবাদ সম্মেলনে বললেনও,‘আমরা চেষ্টা করবো সেশন ধরে এগুতে। যদি আমরা এখানে সফল হই তাহলে একটা ভালো কিছু হতে পারে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখানে আগে কখনো খেলেনি। একমাত্র বিরাসামি পেরমলের কিছু অভিজ্ঞতা আছে। আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হাইপারফরমেন্সের হয়ে এখানে চারদিনের ম্যাচ খেলেছেন তিনি। অপরিচিত হলেও মনে হয় না খুলনার পিচ নিয়ে মোটেও চিন্তিত ক্যারিবীয় শিবির। মঙ্গলবার ক্রিস গেইল অল্প কিছু সময় নেটে ব্যাট করে বিশ্রম করেছেন। তবে শিবনারায়ন চন্দরপল লম্বা সময় নেটে অনুশীলন করেন। অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিও ব্যাটিংটা ঝালিয়ে নিয়েছেন। আসলে আগের টেস্টের আত্মবিশ্বাসটাকে পুঁজি করে ক্যারিবীয় একাদশ খেলতে যাচ্ছে দ্বিতীয় টেস্ট। তাদের শারীরিক ভাষায়ও আত্মবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট। এই দলের বিপক্ষে পাঁচদিন ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলেও অর্জন হিসেবেই পরিগণ্য হবে।

টেস্ট ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের দারুণ কিছু সাফল্য আছে। ২০০৯ সালে তাদের মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ তে জিতেছে বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশও টেস্ট ড্র করেছে। গত বছর চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ড্র করেছে আরেকটি টেস্ট। এপর্যন্ত নয় টেস্ট খেলে পাঁচটিতে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুটিতে বাংলাদেশ। বাকি দুটি ড্র হয়েছে। সর্বশেষ টেস্টেও অসাধারণ খেলেছে। পরিসংখ্যানে লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি থাকলেও বাস্তবতা অন্য। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল স্বাগতিক দলকে ধবলধোলাই দেওয়ার জন্যই খুলনায় এসেছে। এখন বাংলাদেশ তাদের সামনে কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও পর পর দুই টেস্টে ভালো খেলার ইতিহাস বাংলাদেশের তেমন একটা নেই। এমনকি দুই ইনিংসেও ধারাবাহিকতা রাখতে পারে না। ঢাকা টেস্ট তার জলজ্যন্ত প্রমাণ। সেদিক থেকে দেখলে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ দলের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা না করাই ভালো।

খেলাধূলা