ঘাটাইলে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রার্থী রানা জয়ী

ঘাটাইলে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রার্থী রানা জয়ী

জাতীয় সংসদের টাঈাইল-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রার্থী আমানুর রহমান রানা বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার আলিমুজ্জামান বেসরকারি এ ফলাফল ঘোষণা করেন।

৯৬টি কেন্দ্রের সবকটির ফলাফলে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমানুর রহমান খান রানা ৯৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শহিদুল ইসলাম লেবু পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৫৩১ ভোট। ভোটের ব্যবধান ৫২ হাজার ২২৬। নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩২ ভোট।  শতকরা হিসেবে ৫৭ শতাংশ।

টাঙ্গাইল-৩ সংসদীয় আসনে বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া   মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ভোটগ্রহণ। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। তবে যারা ভোট দিতে এসেছেন কোনো ঝামেলা ছাড়াই পছন্দের প্রার্থীকে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যেই ভোট দিতে পেরেছেন তারা। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়ে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। এর পর কিছুটা সময় বিরতি দিয়ে ভোটগণনা শুরু হয়।

এর আগে আলোচিত দুই প্রার্থীর মধ্যে সরকারি দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম লেবু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আমানুর রহমান খান রানা সকালে নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোট দেন। এ সময় একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন তারা। তবে ফলাফল যাই হোক তা মেনে নেয়ার কথা দুজনেই বলেছেন।

শহিদুল ইসলাম লেবু অভিযোগ করে বলেন, আমার বিদ্রোহী প্রার্থী চিহ্নিত বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা কালো টাকা ছড়াছড়ি করছে এবং আমার এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছে না।

সকাল ৮টা ৭ মিনিটে শহিদুল ইসলাম লেবু তার নিজ কেন্দ্র রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দিঘল এবং বাগুন্তা ইউনিয়নে রানা তার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা দখলে রেখেছেন। এ দুটি কেন্দ্র ছাড়া বাকি কেন্দ্রগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সকালে কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, মোটামুটি ৮টার আগ থেকে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে এসেছেন।

ভোট দিতে এসে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমানুর রহমান খান রানা বলেছেন, প্রশাসন  নিরপেক্ষ থাকলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ না থাকে তবে সমস্যার সৃষ্টি হবে।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রানা মুকুল একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন নীরবতা পালন করছে। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা যথেষ্ট তৎপর নয়। তিনি শহিদুল ইসলাম  লেবুর সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

১০ রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুকুল একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়, চানতারা, মির খাইগাইন, কন্না, সাদুরপাড়া নং গলগন্ডা, গৌরঙ্গি, মমিরাজ গলগন্ডাসহ বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে সকাল থেকে দেখা গেছে প্রত্যেক কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি সন্তোষজনক। কিন্তু দুপুরের পর থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কমতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ তুহিন সকালে একাশি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। পরে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান তিনি।

শান্তিপূর্ণভাবে ভোট চলছে এতে আমি সন্তুষ্ট। এভাবে শেষ পর্যন্ত চললে আমি আশা করছি একটি অবাধ ও শান্তির্পূর্ণ ভোট ঘাটাইলের মানুষ জাতিকে উপহার দিতে পারবে।

ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি খুব কম। যার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়া। আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর টানাপড়েনে ভোটারদের উপস্থিতি কম।

তিনি বলেন, যে কোনো নির্বাচনে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে। আমি নির্বাচনের ফলাফল যা হোক মেনে নেব।

এদিকে সকালে রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শাহ আলম নামে রানার এক সমর্থককে মারধর করে লেবুর সমর্থকরা।

এছাড়া গত রাতে রানার আরেক সমর্থককে কুপিয়ে আহত করার খবর পাওয়া গেছে। তবে সার্বিকভাবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা।

টাঙ্গাইল-৩ নির্বাচনী এলাকায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৩২৯ ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৮৬ পুরুষ ও ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৪৩ মহিলা ভোটার রয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও ১টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড রয়েছে। ৯৬টি কেন্দ্রের ৫৮৭টি কক্ষ রয়েছে।

প্রসঙ্গত টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ (শামসুর রহমান খান), ১৯৭৯ সালে বিএনপি ( মো. শওকত আলী ভূঁইয়া), ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ (শামসুর রহমান খান), ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি (সাইদুর রহমান খান মোহন), ১৯৯১-১৯৯৬-২০০১ সালে একাধারে বিএনপি (লুৎফর রহমান খান আজাদ) এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ (ডা. মতিউর রহমান) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশ রাজনীতি