সম্মিলিতভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

সম্মিলিতভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার নিবেদিত অংশগ্রহণই দুর্যোগ মোকাবিলার মূল শক্তি। দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্মিলিত চেষ্টা করতে হবে।

রবিবার সকালে মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে আধুনিক এবং যুগোপযোগী করা গেলে জনসাধারণের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত হবে।

এ কারণে এ প্রতিষ্ঠানটিকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি কর্মরতদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েছি।

সকলের নিবেদিত অংশগ্রহণই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের শক্তি বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সকালে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, স্বরাষ্ট্র সচিব সিকিউকে মুসতাক আহমেদ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক আবু নাঈম মো. শহিদুল্লাহ তাকে স্বাগত জানান।

এরপর জাতীয় সংগীত বাজানো হয় এবং বাহিনীর তিনটি কনটিনজেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানায়। বেলুন উড়িয়ে সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে কুচকাওয়াজ, অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কাজের মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মূল ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা এবং রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উদ্বোধন করেন।

এর আগে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ফায়ার ব্রিগেড সদস্যদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।

১৯৭১ সালে পলাশী ব্যারাক ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয় ছাত্র-জনতার সঙ্গে ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য প্রাণ দেন ২৫ অগ্নিসেনা।

সেই শহীদদের স্মরেণেই মিরপুরে সমপ্রতি এ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়।

শীত মৌসুমে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত আগুন লাগার প্রবণতা  বেশি থাকে।

অনেকে ম্যাচের কাঠি অপচয়ের জন্য চুলা বন্ধ করেন না। সিগারেট খেয়ে ছুড়ে ফেলেন। আমাদের সচেতন হতে হবে। রান্নার পর চুলা নিভিয়ে ফেলতে হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার গভীর রাতে হাজারীবাগের বৌবাজারে অগ্নিকান্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাজারীবাগে অগ্নিকান্ডের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ফায়ার ব্রিগেড গেছে। ঘিঞ্জি এলাকা বলে পৌঁছতে সময় লাগলেও অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে।

আগুনে ১৪ জনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওখানে কেরোসিন তেল রাখা হতো। কেউ খেয়াল রাখেনি এ বিষয়টি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা তাদের দায়িত্বে আরো দক্ষতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে সচেষ্ট হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আপনারা যে কাজটি করেন তাতে সময় ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। দেশের মানুষ আপনাদের প্রতি যে আস্থা রেখেছে তাতে কোনো অবস্থাতেই শৈথিল্য দেখানো যাবে না।

এ জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা অনেক সময় নিজেরাও আগুনে দগ্ধ হন। তাদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগে ঝুঁকি ভাতা না পেলেও বর্তমান সরকারের সময়ে তা প্রবর্তনের কথা মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রচলিত পদক প্রদানের সংখ্যা ৫০ এ উন্নীত করেছি। পদকের সাথে সম্মানী দশ হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে যথাক্রমে এক লাখ, পঁচাত্তর হাজার ও পঞ্চাশ হাজার টাকা করা হয়েছে।

মিরপুরের এই ট্রেনিং কমপ্লেঙে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি অন্য কোথাও বড় পরিসরে স্থানান্তর করে একাডেমিতে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।

বাংলাদেশ