জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির হয়ে জামিননামা দাখিল করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এ নিয়ে চারবার তিনি পুরান ঢাকার নিম্ন আদালতে এলেন।
প্রথমবার আসেন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একটি দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে পুরান ঢাকায় মহানগর বিশেষ দায়রা আদালতে, দ্বিতীয়বার আসেন ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে, তৃতীয়বার আসেন ২০০৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির দিন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির হন।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার চার্জ গঠনের শুনানিতে ফের তিনি পুরান ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতে আসবেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকার মহানগর হাকিম শাহাদাত হোসেন পাঁচ হাজার টাকার মুচলেকায় জামিননামা দাখিলের অনুমতি দিলে তিনি বেলা পৌনে একটায় এ জামিননামা দাখিল করেন।
আদালতে কক্ষে বসেই তিনি জামিননামায় স্বাক্ষর করেন। আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও স্থানীয় জামিনদার হিসেবে অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভুইঞা জামিননামায় স্বাক্ষর করেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জামিননামা দাখিলের অনুমতির জন্য মঙ্গলবার সাড়ে ১২টায় ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির হন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। এরপর ১২টা ৪০ মিনিটে তিনি আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। সাথে সাথে এজলাসে ওঠেন মহানগর হাকিম শাহাদাত হোসেন। তিনি মূলত সিএমএম নতুন ভবনের চতুর্থ তলার এজলাসে বসেন। কিন্তু লিফট না থাকায় খালেদা জিয়ার পক্ষে উক্ত এজলাসে ওঠা সম্ভব নয় জানিয়ে সোমবার খালেদার আইনজীবীদের আবেদনক্রমে সিএমএম পুরনো ভবনের নীচতলার ১৩ নম্বর এজলাসে শুনানির ব্যবস্থা করা হয়।
এ সময় অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার খালেদা জিয়াকে চেয়ারে বসার জন্য অনুমতি চাইলে বিচারক তাকে বসার অনুমতি দেন। এরপরই বিচারক খালেদা জিয়াকে জামিননামা দাখিলের অনুমতি দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যান।
খালেদার হাজিরাকে কেন্দ্র করে আদালতে উপস্থিত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম, রুহুল কবির রিজভী, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলমসহ বিএনপির শতাধিক আইনজীবী ও নেতাকর্মীরা।
এদিকে খালেদার হাজিরা উপলক্ষে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোর থেকেই কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে পুরো আদালত এলাকা। এরই ধারাবহিকতায় নাশকতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে সন্দেহভাজন ২৩ ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
অপরদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী সিএসএফ (চেয়ারপার্সন্স সিকিউরিটি ফোর্স) সদস্যরাও বেশ তৎপর ছিলেন।
সোমবারই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন মঙ্গলবার ঢাকার নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী জানান, জামিননামা দাখিলের আগে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সোমবারই শেষ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন ও গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্টের বেঞ্চ এ মামলায় খালেদা জিয়াকে ৮ সপ্তাহের জামিন দিয়ে ওই সময়ের মধ্যে ঢাকার নিম্ন আদালতে জামিননামা দাখিলের নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশমতো তিনি মামলার জামিননামা দাখিল করতে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির হন।
একই মামলায় অপর দুই আসামি মনিরুল ইসলাম ও জিয়াউল ইসলাম মুন্না গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকার নিম্ন আদালতে জামিননামা দাখিল করেছেন। তারা ১৪ ডিসেম্বর একই বেঞ্চ থেকে জামিন পান। মামলার এজাহার ও চার্জশিটভূক্ত অপর আসামি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী পলাতক আছেন।
সোমবার এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। দুদকের পরিচালক হারুনুর রশিদ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ও দন্ডবিধি ১০৯ ধারায় এ চার্জশিট দাখিল করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদার বিরুদ্ধে এটিই প্রথম চার্জশিট।
গত বছর ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চার জনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।