‘আন্দোলন করে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করা যাবে না’

‘আন্দোলন করে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করা যাবে না’

আন্দোলন-সংগ্রাম করেই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে। তাই এ সরকারকে আন্দোলন করে নার্ভাস বা ভয় দেখানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আন্দোলন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ বন্ধ করার বিরোধী দলের এ চিন্তা ভুল প্রমাণিত হবে। বিচার বন্ধ করার নানা ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, বাংলার মাটিতে এসব খুনির বিচার হবেই।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি নবনির্মিত স্থাপনা উদ্বোধন ও নির্মীয়মাণ স্থাপনার ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

উদ্বোধনের পর সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যারা আমাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন সেই ড. মুনির চৌধুরী, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্যসহ অনেক শিক্ষককে পাকিস্তানি ও তার দোসররা হত্যা করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্রকে হত্যা করেছিল। তাদের বিচার করা আমার দায়িত্ব।

বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে তিনি কবি সুফিয়া কামাল হল উদ্বোধন করেন। এর পর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আবাসন বঙ্গবন্ধু টাওয়ার উদ্বোধন করে সিনেট ভবনে আসেন তিনি।

এ সময় রাস্তার দু’পাশে হাজার হাজার ছাত্রলীগ নেতাকর্মী প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী, ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনসহ মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য, সংসদ সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রমুখ।

ঢাবির প্রাক্তন ছাত্রী ছিলেন উল্ল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সব আন্দোলনের যাত্রা। দেশের মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের অনেকেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জন্য যথেষ্ট করেছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাই ঢাবির শিক্ষার্থী ছিলেন বলে তিনি গর্ববোধ করেন।

তিনি বলেন, আমরা যা অর্জন করেছি তার সবই রক্ত দিয়ে কেনা। অনেক ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা পেয়েছি। এখন তা অর্থবহ করতে হবে। এছাড়া নিজের বেতনের বড় একটা অংশ ঢাবির উন্নয়ন ফান্ডে দিয়ে দেবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। একইসাথে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের প্রত্যেকের ভালো অবস্থান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বোচ্চ সহায়তা করার আহবান জানান।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও ঢাবির ছাত্র ছিলেন উল্ল্লেখ করে বলেন, নৈতিক দাবি আদায়ে আমরা অনেক আন্দোলন এ ক্যাম্পাসে করেছি। তিনি বলেন, কবি সুফিয়া কামাল হলে প্রায় এক হাজার ৩২ জন ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী যেসব ভবন উদ্বোধন করেছেন তা যথাসময়ে সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সংকট সমাধান হবে।

তিনি বলেন, মুনাফার লোভে অনেকেই এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। তবে আমরা অনেককেই নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বর্তমান শিক্ষানীতিই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে শেষ হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রীদের জন্য নির্মিত কবি সুফিয়া কামাল হল উদ্বোধন করেন এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

উল্লেখ্য, ১২টি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করতে পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আজ ক্যাম্পাসে আসেন প্রধানমন্ত্রী। ভবনগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু টাওয়ার, রোকেয়া হলের ৭ মার্চ ভবন, ফার্মেসি অনুষদের নতুন ভবন, নবনির্মিত কবি সুফিয়া কামাল হল, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, জগন্নাথ হলের সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবন, উচ্চতর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি।

বাংলাদেশ