সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসব: সমাপনী দিনে বাড়ি দখলমুক্ত করার দাবি

সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসব: সমাপনী দিনে বাড়ি দখলমুক্ত করার দাবি

বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়িটি দখলমুক্ত করার দাবি জানানোর মধ্য দিয়ে সোমবার রাতে শেষ হয়েছে পাবনায় আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী তৃতীয় ‘সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসব’।

শহরের মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল পৌর মুক্তমঞ্চে সোমবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলা সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ।

বিশেষ অতিথির ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাবনা-৪ আসনের সাংসদ শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ নূরুন্নবী।

বরেণ্য অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- চিত্রনায়িকা সুজাতা ও চিত্রনায়ক আলমগীর।

তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ভিডিও পাইরেসি বন্ধ করার জন্য কাজ করছে। চলচ্চিত্রের সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে আলাদা ফিল্মসিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সিনেমা হলগুলো আধুনিকায়ন করারও চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তথ্যমন্ত্রী পাবনাবাসী ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন, যেনো বাড়িটির কোনো ক্ষতি না হয়। কারণ বাড়িটি উদ্ধারের জন্য আইনি জটিলতা নিরসনে বর্তমান সরকার আন্তরিক।’

বরেণ্য অতিথির বক্তব্যে চিত্রনায়ক আলমগীর বলেন, ‘ছোটবেলায় প্রথম পাবনাকে জেনেছিলাম মেন্টাল হসপিটালের মাধ্যমে। এরপর জেনেছি কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের বাড়ি পাবনায়। সর্বশেষ জেনেছি দেশের প্রয়াত বিশিষ্ট শিল্পপতি স্যামসন এইচ চৌধুরীর বাড়ি পাবনায়। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করি।’

আলমগীর আরও বলেন, ‘১৯৮০ সালের পর সুচিত্রা সেন স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যাবার পর কারো সঙ্গে দেখা করেননি। কিন্তু আমি একমাত্র ব্যক্তি তার সঙ্গে তিনবার দেখা করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। তারই স্মরণে এ চলচ্চিত্র উৎসবে আপনারা যে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’

অপর বরেণ্য অতিথি সুজাতা তার বক্তব্যে বলেন, ‘সুচিত্রা সেনের বাড়ি পাবনায় এটা আমার জন্য গর্ব। সুচিত্রা সেন আমার অভিনয়ের আদর্শ। আমার বড় বোনের নাম রমা। তাই তার ছবি দেখে তাকে দিদি বলে ডাকতাম।’

সুজাতা বলন, ‘উত্তম-সুচিত্রা জুটি আজও ভোলা যায় না। সুচিত্রার মতো অভিনেত্রী বাংলাদেশ আর পাবে না। তিনি ছিলেন অনেক বড় মনের একজন মানুষ। তিনি আজ অসুস্থ। আমি তার সুস্থতা কামনা করি। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে পাবনাবাসী যে আয়োজন করবে আমি সেখানে ছুটে আসবো।’

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপিত এম সাইদুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর পিপিএম, চিত্রনায়িকা শিমলা, চিত্রনায়ক নীরব ও ইউনিভার্সাল গ্রুপের  মার্কেটিং ম্যানেজার আলহাজ রাজিউর রহমান রুমী।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন পাবনা একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড জাকির হোসেন, পাবনা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গণেশ দাস, পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল, সুচিত্রা স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের অর্থ সম্পাদক রেজউল করিম মনি প্রমূখ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. রামদুলাল ভৌমিক।

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। আলোচনা সভা শেষে প্রদর্শন করা হয় ‘একটি রাত’ চলচ্চিত্রটি।

সমাপনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্বাধীন মজুমদার ও ফারজিনা ইয়াসমিন।

প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উৎসব উদ্বোধন করেছিলেন চিত্রনায়ক ফারুক। তার সঙ্গে ছিলেন চলচ্চিত্রাভিনেতা প্রবীর মিত্র ও চিত্রনায়িকা রোজিনা।

উৎসবের প্রথমদিনে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে গেরিলা, আঁধি, গৃহদাহ, সানফ্লাওয়ার ও হসপিটাল চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করে পাবনার অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেড ও রূপকথা সিনেমা।

বিনোদন শীর্ষ খবর