রাজশাহী মহানগরী ও এর আশপাশের অর্ধশতাধিক স্থানে অন্তত ৫ হাজার শিবির ক্যাডার অবস্থান করছে। নেতাদের নির্দেশে দিনের যে কোনো সময় বিভিন্ন গ্রুপে বিভিক্ত হয়ে তারা নগরীতে চোরাগোপ্তা হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ তাদের সঠিক অবস্থান না জানার কারণে বড় ধরনের গ্রেফতার অভিযান চালাতে পারছে না।
রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা এর সত্যতা স্বীকার জানিয়েছেন, শিবিরকর্মীরা তাদের নির্ধারিত মেসগুলোতে থাকছে না। এর ফলে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাদের থাকার নতুন জায়গাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এস এম মনির-উজ-জামান জানিয়েছেন, শিবির সংগঠিত হয়ে মিছিল করার সুযোগ পাচ্ছে না। কিন্তু, তারা বিভক্ত হয়ে ছোট ছোট দলে মিছিল করার চেষ্টা করছে। তবে পুরো মহানগরীতে পুলিশ সজাগ রয়েছে।
পুলিশ ও শিবিরের বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রাজশাহী মহানগরী ছাড়াও এর আশে-পাশে অর্ধশতাধিক স্থানে শিবিরের অন্তত ৫ হাজার কর্মী অবস্থান করছে। এর মধ্যে বাইরের শিবিরকর্মীরাও রয়েছে। এরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে রয়েছে। শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ আসা মাত্রই সেখানে ঝটিকা মিছিল করছে আর পুলিশ দেখামাত্র ইটপাটকেল ছুড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
শিবির ক্যাডারদের এ কৌশলের কারণে পুলিশ অনেকটাই হতবিহ্বল হয়ে পড়ছে। কোথায় কখন শিবির মিছিল করবে, এ নিয়ে পুলিশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
শিবির ক্যাডারদের নিরাপদ আস্তানা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর, মেহেরচণ্ডী, কাটাখালী, বুধপাড়া, নামো ভদ্রা, মহিষবাথান, হেতেমখাঁ, শিরোইল, শান্তিবাগ, নওদাপাড়া, তালাইমারি, বিলসিমলা, ছোট বনগ্রাম ও বিসিক এলাকায় নিরাপদ ঘাঁটি তৈরি করেছে শিবির। বাসাবাড়ি ভাড়া করে সেখানে তারা অবস্থান করছে।
তবে বিনোদপুর, তালাইমারি মেহেরচণ্ডী এলাকার শিবিরের চিহ্নিত ছাত্রবাসগুলোতে তারা এখন আর থাকছে না। রাজশাহী মহানগরী ছাড়া ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে শিবির নতুন আস্তানা গড়েছে। এর মধ্যে কাটাখালী, বানেশ্বর, পুঠিয়া উপজেলা সদর, পবার নওহাটা, গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ি হাট রয়েছে।
পাঁচ হাজার শিবির ক্যাডারের অবস্থান: পুলিশের অভিযানে আটক শিবির ক্যাডারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য ও শিবির নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে নগরীসহ এর আশেপাশে প্রায় ৫ হাজার শিবিরকর্মীরা অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। এরা শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কখন কোথায় মিছিল করতে হবে, তা জেনে সেই মোতাবেক অবস্থান নিচ্ছে, আর সুযোগ পাওয়া মাত্রই মিছিল বের করছে। মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ভদ্রা ও তালাইমারিতে শিবির ঝটিকা মিছিল বের করে। তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই তারা মিছিল করে নিরাপদে চলে যায়।
মহানগর বোয়োলিয়া জোনের সহকারী কমিশনার রোকনুজ্জামান বলেন, “আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, রাজশাহী ও এর আশে-পাশের এলাকায় সবমিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার শিবির কর্মীরা থাকতে পারে। তবে তাদের বক্তব্য কতটুকু যুক্তিযুক্ত, তা খতিয়ে দেখতে হবে।”
এদিকে, এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তোহা বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবমিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার শিবিরকর্মী তাদের এখন প্রস্তুত রয়েছে। এরা প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রুপে উপগ্রুপে বিভিক্ত নগরীর বিভিন্ন মোড়ে থাকছে। আর সুযোগ পাওয়া মাত্রই মিছিল করছে।”
তিনি বলেন, “প্রয়োজন হলে বিভিন্ন জেলা থেকে শিবিরের আরও কর্মীকে রাজশাহীতে আনা হবে। আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি যে কোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করতে চাই। ”
এদিকে, শিবিরকর্মীদের সঠিক অবস্থান না জানার কারণে পুলিশ সঠিকভাবে অভিযান চালাতে পারছে না। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তাদের অবস্থান নির্নয় করতে পারছে না।
তবে মহানহগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, “পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত শিবির কর্মীদের অবস্থান নির্নয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।”
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী পুলিশ কমিশনার এসএম মনির-উজ-জামান বলেন, “নগরীতে পুলিশের টহল জোরদার করার কারণে শিবিরকর্মীরা সংগঠিত হয়ে মিছিল করার সুযোগ পাচ্ছে না। তবে বিচ্ছিন্নভাবে করার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “এ কারণে পুলিশ তৎপর রয়েছে। নাশকতা রোধ করতে পুলিশ সবকিছুই করবে।”