পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পাওয়া ওরিয়ন ফার্মার আইপিও আবেদনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে আগামী ৬ থেকে ১০ জানুয়ারি। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে যাবতীয় কার্যাবলী সম্পন্ন করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালে আইপিও আবেদনের প্রস্তুতি নিয়ে দীর্ঘ সময় পর তালিকাভুক্তির প্রস্তুতি সম্পন্ন করায় এ কোম্পানিকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
কোম্পানি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এ কোম্পানিকে ৫০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ইস্যু মূল্য ৬০ টাকা নির্ধারণ করে আইপিওতে আসার অনুমোদন দিয়েছে। ওরিয়ন ফার্মা বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যা ১৯৬৫ সাল থেকে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এবং এফডিএ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী একটি নতুন ফ্যাক্টরী স্থাপন করতে যাচ্ছে যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। নতুন ফ্যাক্টরীতে কাজ শুরু হলে কোম্পানির উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে ওরিয়ন গ্রুপ ফার্মাসিউটিক্যালস ব্যবসা ছাড়াও বিদুৎ উৎপাদন, ফ্লাইওভার নির্মান, কম্পোজিট টেক্সটাইল, এগ্রো-প্রোডাক্টসহ আরো অনেক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও ওরিয়ন গ্রুপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে যা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মিটাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
এদিকে এ কোম্পানির অনুমোদন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে এ কোম্পানির অনুমোদনকে স্বার্থান্বেসী মহলের যোগসাজশ বলে মনে করছে। ডিএসই এ কোম্পানির অনুমোদনের বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য যেসব প্রশ্ন উত্থাপন করেছে সেগুলোকে পুঁজি করে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছে। এর মধ্যে রয়েছে একই ব্যক্তির ৩ কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অবস্থান এবং আনুষঙ্গিক কয়েকটি হিসাব সর্ম্পকে।
এ বিষয়ে শেয়ার নিউজ২৪ ডটকমের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অনেক বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশে যে সব প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক সফলতা লাভ করেছে ওরিয়ন গ্রুপ তাদের মধ্যে অন্যতম। এ গ্রুপের একাধিক কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। সবগুলোই স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়েছে। ওরিয়ন ফার্মার আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রেও কোনো প্রকার অনিয়ম কিংবা বিধি বিধান লঙ্ঘন করা হয়নি। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিষয়টি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি আইনের বিধি বিধান অনুযায়ী পরিবর্তন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এর বাইরে ডিএসই’র অন্যান্য যাচাইমূলক প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক জবাব যথাসময়ে ডিএসইকে দেয়া হয়েছে বলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান।
এ বিষয়ে কোম্পানি সেক্রেটারি ফেরদাউস জামান জানান, ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল ৭৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ আইপিওর আবেদন করে ওরিয়ন ফার্মা। সেটি ব্যাপকভিত্তিক যাচাই বাচাইয়ের পর ১৬ অক্টোবর অনুমোদন দেয় এসইসি। ইস্যূটি অনুমোদনের পূর্বে এসইসি কর্তৃক প্রচুর তথ্য/ব্যাখ্যা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি আমাদের কাছে চাওয়া হয়। আমরা কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে এসইসি’র চাহিদা মোতাবেক সমস্ত তথ্য উপাত্ত ও কাগজপত্রাদি সরবরাহ করেছি। এসইসিতে পাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ডিএসই কোম্পানির কাছে কোনো তথ্য চায়নি। ইস্যুটি অনুমোদন লাভের পর ডিএসই বিভিন্ন সময়ে যেসব কাগপত্র তথ্য/ব্যাখ্যা আমাদের কাছে চেয়েছে তার সবই সরবরাহ করেছি। অর্থাৎ এই ইস্যূর ব্যাপারে এসিইসি এবং ডিএসই কোনো প্রকার অসঙ্গতি বা প্রিমিয়াম নির্ধারণে অযৌক্তিকতা খুঁজে পায়নি।
ওরিয়ন ফার্মার তালিকাভুক্তির বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন সাবেক উপদেষ্টা বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের যে দুর্দিন চলছে তাতে কোনো ভালো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে সকলের উচিত তাতে সহায়তা করা। এটি না করে যদি কেউ এর বিপক্ষে অবস্থান নেয় সে ক্ষেত্রে তাদের এ অবস্থান বিনিয়োগকারীদের কাছে নতুন করে প্রশ্নের সৃষ্টি করবে।