পরনারীর সঙ্গে গোপন সম্পর্কের জেরে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সিআইএ প্রধান ডেভিড পেট্রাউসের পথ ধরে এবার ফাঁসতে যাচ্ছেন আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা জেনারেল জন অ্যালেনও। এক নারীকে, ‘কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে যথার্থ নয়’, এমন ইমেইল করার ঘটনায় তার বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডেভিড পেট্রাউসকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া কেলেঙ্কারির সঙ্গে আবার ওই নারীর প্রত্যক্ষ যোগসূত্র আছে, এমনটিই দাবি করছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম। সব মিলিয়ে পেত্রাউস-পাওলা কেলেঙ্কারি এবার পিছু নিলো জন অ্যালেনরও।
ইতিমধ্যেই জেনারেল জন অ্যালেনের সঙ্গে জিল কেলি নামের ওই নারীর সম্পর্কের বিষয়বস্তু খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে এফবিআই। সব কিছু মিলে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের জড়িয়ে সৃষ্টি হওয়া কেলেঙ্কারিটি আগামীতে নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পুনঃনির্বাচিত হওয়ার মাত্র একদিন পরই উন্মোচিত এ কেলেঙ্কারিটি তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে হোয়াইট হাউস ও পশ্চিমা গণমাধ্যমে। সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিনই প্রকাশ পাচ্ছে কোনো না কোনো মুখরোচক খবর। বেরিয়ে আসছে রথী মহারথীর নাম, যার মধ্যে নতুন সংযোজন জেনারেল জন অ্যালেন।
এফবিআই ইতিমধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রায় ত্রিশ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র যাচাই করছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই জন অ্যালেন ও জিল কেলির মধ্যে ইমেইল চালাচালির বিবরণ।
উল্লেখ্য,জিল কেলির একটি অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া তদন্তই শেষ পর্যন্ত ডেকে নিয়ে আসে সাবেক চার তারকা জেনারেল পেট্রাউসের পতন। বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করে স্বেচ্ছায় নিজের পদ থেকে সরে যান পেট্রাউস। নিজের জীবনীকার পাওলা ব্রডওয়েলের সঙ্গে গোপন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন তিনি।
এফবিআইয়ের কাছে ফ্লোরিডার টাম্পা নিবাসী জিল কেলির করা একটি অভিযোগের সূত্র ধরে ঘটনার সূত্রপাত। ইমেইলের মাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে এফবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করেন তিনি। পরবর্তীতে গোয়েন্দারা তদন্ত করে এর সঙ্গে পাওলা ব্রডওয়েলের সংশ্লিষ্টতা উদঘাটন করেন। এরপরই মূলত ফাঁস হয়ে যায় পাওলা ও পেট্রাউসের প্রেমের সম্পর্ক।
এখন দেখা যাচ্ছে অভিযোগকারিনী জিল কেলি নিজেই আফগানিস্তানে নিযুক্ত আরেক সেনা কর্মকর্তা জন অ্যালেনের সঙ্গে গোপন বার্তা চালাচালির সঙ্গে জড়িত। আফগানিস্তানে যাওয়ার আগে ফ্লোরিডার টাম্পা ভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের সহকারী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন জন অ্যালেন।
পেট্রাউসের পর আফগানিস্তানে মোতায়েন যৌথ বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন জন অ্যালেন। আর পেট্রাউস যোগ দেন সিআইএ‘র শীর্ষ পদে।
এ প্রসঙ্গে নাম না প্রকাশ করা পেন্টাগনের এক শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায় পেট্রাউস-ব্রডওয়েল কেলেঙ্কারির সঙ্গে জিল কেলিকে করা জন অ্যালেনের ইমেইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।কেলির সঙ্গে অ্যালেনের যোগাযোগ সম্পর্কিত নথিপত্র এখন এফবিআইয়ের তদন্তের অধীন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
তবে যাকে ঘিরে এত কিছু সেই জন অ্যালেন কিন্তু নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। অনৈতিক কিছুর সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার সম্ভাবনাকেও নাকচ করে দেন তিনি।
এদিকে তদন্ত চললেও আফগানিস্তানে নিজের চলতি দায়িত্বে বহাল থাকবেন জন অ্যালেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডেভিড প্যানেট্টা এমনটাই জানিয়েছেন। তবে তিনি তার পরবর্তী কর্মস্থল ইউরোপে ন্যাটো কমান্ডের প্রধান ও মার্কিন বাহিনীর প্রধান হিসেবে এখনই যোগ দিতে পারছেন না।
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার ওই পদে যোগদান স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যানেট্টা। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও এ ব্যাপারে অবগত হয়েছেন জানা গেছে। যদিও বেশ কিছুদিন আগেই আফগানিস্তান থেকে তাকে ইউরোপে গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্বে বদলি করা হয়েছিলো।
এর আগে গত সোমবার নর্থ ক্যারোলিনার শারলোত্তেতে অবস্থিত পাওলা ব্রুডওয়েলের বাড়িতে তল্লাশি চালায় এফবিআই। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালায় তারা।
তবে এ সময় বাড়িতে ছিলেন না তিনি। কেলেঙ্কারির ঘটনাটি উন্মোচনের পর থেকেই মিডিয়ার সামনে থেকে গা বাঁচিয়ে চলছেন পাওলা।