সিরিয়ার আসাদ বিরোধী আন্দোলনকারীদের নতুন জোটকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছে আরব লীগ। কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়।
এর আগে গত রোববার কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহীদের বিভিন্ন পক্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ নতুন জোট গঠনে একমত হয়।
২২টি আরব রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত আরবলীগের একটি কমিটি নবগঠিত এ জোটকে অভিনন্দন জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে।
তবে আরব লীগের দুই সদস্য রাষ্ট্র আলজেরিয়া ও ইরাক চুক্তির কয়েকটি শর্তের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করেন বলে জানান কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হামাদ বিন জসিম আল-থানি।
তবে তিনি এ ব্যাপারে আরব লীগ এবং ছয় জাতি উপসাগরীয় জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের( জিসিসি) মধ্যে কোনো মত বিরোধের কথা উড়িয়ে দেন।
তিনি বলেন,“এই দাবি একেবারেই সত্যি নয়। কারণ আরব লীগ এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ এক ও অভিন্ন সত্তা।
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধে আসাদ সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্য দেশটির বিদ্রোহী বিভিন্ন পক্ষ গত দুইবছর ধরে চেষ্টা চালালেও এ ব্যাপারে বিদ্রোহীদের একক কোনো সামরিক পরিকল্পনা এমনকি তাদের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিলো না।
তাই এ ব্যাপারে একটি একক ও অভিন্ন প্লাটফর্মে পৌঁছানোর জন্য বাশার বিরোধী আরব দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো সিরীয় বিদ্রোহীদের বিভিন্ন পক্ষের ওপর অনেকদিন ধরেই চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছিলো।
এ পরিস্থিতিতে কাতারের রাজধানী দোহাতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিদ্রোহীদের বিভিন্ন পক্ষ একটি নতুন জোট গঠনে সম্মত হলে রোববার এ ব্যাপারে একটি চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
বিদ্রোহীদের মুখপাত্র মুহাম্মদ দুঘাম জানান, নতুন জোটের প্রধান উদ্দেশ্য আসাদ সরকারের পতন ঘ্টানো। এ ছাড়া চু্ক্তির শর্ত অনুযায়ী নতুন জোটের অংশ কোনো পক্ষ আসাদ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে পারবে না।
সিরিয়ায় সম্পূর্ণ নতুন একটি সরকার গঠন না করা পর্যন্ত চলমান লড়াই অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও একমত হন তারা।
আহমেদ মুয়াজ আল-খতিবকে বিদ্রোহীদের এই নতুন জোটের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। তিনি দামেস্কের ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদের খতিব ও ইমাম ছিলেন।আসাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার সময় একে দৃঢ় সমর্থন যোগানোর অপরাধে কারারুদ্ধ করা হয়েছিলো তাকে। তবে কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই তিনি দেশত্যাগ করেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করা হয় রিয়াদ সাইফ ও বিশিষ্ট নারী অধিকার ও মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব সুহায়ের আতসিকে।
রিয়াদ সাইফ দামেস্কের একজন খ্যাতনামা ব্যবসায়ী। পাশাপাশি সিরীয় রাজনীতিতেও তিনি অভিজ্ঞ বলে জানা গেছে। স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে এর আগে সিরীয় পার্লামেন্টেও প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
পাশাপাশি খ্যাতনামা আইনজীবী সুহাইর আতসিও সরকার বিরোধী আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য সুপরিচিত।তিনি এ আন্দোলনকে সবার জন্য(বিশেষ করে নারীদের) সমান অধিকার আদায়ের আন্দোলন হিসেবে অভিহিত করেন।
এদিকে বাশার আল-আসাদের অনুগত সিরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মানবাধিকার সংগঠন ‘সিরিয়ান হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক’ বিদ্রোহীদের নতুন জোট এবং এর সমর্থকদের সন্ত্রাসবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
সিরিয়ার শাসক গোষ্ঠী সিরিয়ার বর্তমান সহিংসতাকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করতে বরাবরের মতই অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। তাদের ভাষায় বিদেশী পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্ত ‘সন্ত্রাসীরা’ দেশকে ধ্বংস করতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত।