বাংলাদেশের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা এশিয়ার মধ্যে অন্যতম

বাংলাদেশের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা এশিয়ার মধ্যে অন্যতম

বাংলাদেশের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মসূচি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সফল কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমর্থনের মাধ্যমে প্রজনন এবং পরিবার কল্যাণে বাংলাদেশ শিগগিরই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবে । পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে ২০১৫ সাল নাগাদ দেশে জনসংখ্যার উর্বরতার হার প্রতিস্থাপন পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার ঢাকার একটি হোটেলে পার্টনারস ইন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি) সচিবালয়ের ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা উচ্চ হারে বাড়লেও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে প্রজনন হার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৫ সাল নাগাদ জনসংখ্যার ঊর্বরতার হারপ্রতিস্থাপন পর্যায়ে নেমে আসবে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রত্যেক নারী যখন গড়ে ২ দশমিক ১টি শিশুর জন্ম দেবে- সেটিই হবে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রতিস্থাপন পর্যায়। অর্থাৎ ওই সময়ের পর থেকে জন্ম নেয়া প্রতি দুটি শিশু জনসংখ্যায় তাদের বাবা-মাকে প্রতিস্থাপন করবে। আর যেহেতু মানুষের সন্তান জন্মদানের সক্ষমতার বয়স গড় আয়ুর চেয়ে কম, সেহেতু বাড়তি ওই দশমিক ১টি শিশু জনসংখ্যার ভারসম্য রক্ষা করবে।
তত্ত্বীয়ভাবে পরতিস্থাপন পর্যায়ে নেমে এলে একটি প্রজন্মের জনসংখ্যা তাদের আগের প্রজন্মের চেয়ে কমে আসে।
পিপিডি সচিবালয়ের ভিত্তিফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ।

এই বিশাল যুব শ্রেণী বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করবে। মোট কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং যুব নির্ভরশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম পূর্ণবয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আমাদের দেশ উপকৃত হবে।
তিনি জানান, ১৯৭৫ সালে দেশে যেখানে জন্মনিরোধক ব্যবহারকারীর হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল, ২০১১ সালে তা ৬১ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এতে করে ১৯৭৪ সালের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৬১ শতাংশ থেকে বমে ২০১১ সালে হয়েছে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০০১ সালে মাতৃমৃত্যুর হার যেখানে প্রতি লাখে ৩২২ জন ছিল, ২০১০ সালে তা কমে ১৯৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
১৯৯৪ সালে মিশরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত সাউথ সাউথ কো-অপারেশন এর জনসংখ্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পিপিডি গঠন করা হয়। এর ১০টি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক যে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে পিপিডির সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১২ সালে এসে ২৫ এ উন্নীত হয়েছে। বিশ্বের ৫৭ শতাংশের বেশি মানুষ এই ২৫টি দেশে বসবাস করেন।
তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পিপিডি সচিবালয় স্থাপনের পর থেকে স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর ২০ হাজার ডলার দিয়ে যাচ্ছে এ কার্যালয় পরিচালনার জন্য। এছাড়া সচিবালয়ের জন্য যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জামা আমদানির ক্ষেত্রেও কর অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। প্রতিশ্রতি অনুযায়ী আমরা পিপিডি সচিবালয় স্থাপনের জন্য ৬৪ ডেসিমেল জমি বরাদ্দ দিয়েছি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১ লাখ ৭১ হাজার ডলার ব্যয়ে এই জমি ক্রয় করেছে। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এ সচিবালয়ের নির্মাণ কাজ শুরুর পর স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নির্মাণ কাজের জন্য আরও ৫০ হাজার ডলার বরাদ্দ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।

বাংলাদেশ