দেশের বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য- চাল, ডাল, রসুন, আদা ও চিনির দাম। তবে কিছুটা কমতির দিকে পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের দাম।
সোমবার বাংলানিউজের অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
চাল : চালের বাজারে আঁচ লেগেছে ডলার ও জ্বালানির। সব ধরনের চালের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। চাক্তাইয়ের পাইকারি চাল বিক্রেতা হাজী জামাল অ্যান্ড ব্রাদার্সের কর্মকর্তা প্রণব বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, পারি সিদ্ধ ও আমদানি করা ভিয়েতনামি আতপ ছাড়া প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে।
তিনি জানান, সোমবার দেশি বেতি চাল (৫০ কেজি) ১ হাজার ৫৫০ টাকা, ইরি ১ হাজার ২৭০ টাকা, মিনিকেট আতপ ১ হাজার ৬০০ টাকা, সিদ্ধ ১ হাজার ৭০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। যা গত সপ্তাহে ছিল যথাক্রমে দেড় হাজার, ১ হাজার ২৪০, ১ হাজার ৫৮০ টাকা ও ১ হাজার ৬৭০ টাকা। এছাড়া মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে পারি সিদ্ধ ১ হাজার ৪৫০ টাকা ও ভিয়েতনামি নতুন আতপ ১ হাজার ৩৫০ টাকা, পুরনো ১ হাজার ৪৫০ টাকা।
জামাল অ্যান্ড ব্রাদার্সে চিনিগুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫ দিন আগের তুলনায় ১০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ১০০ টাকা। এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে কাটারি ২ হাজার ৯০০ টাকা ও নতুন গোবিন্দভোগ ২ হাজার টাকা।
এদিকে, সোমবার চাক্তাইয়ে প্রায় ২০ টাকা বেড়ে দেশি মোটা সিদ্ধ (৫০ কেজি) ১ হাজার ২৫০ টাকা, দেশি মোটা আতপ ১ হাজার ১৮০ টাকা, দেশি বালাম সিদ্ধ ১ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চাল আমদানিকারকেরা সম্প্রতি লোকসানে পড়ায় নতুন করে আমদানিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। অন্যদিকে ডলারের মূল্য বেড়েছে অনেক বেশি। এছাড়া, দিনাজপুর, আশুগঞ্জ, নওগাঁ ও রাজশাহী জেলায় ধানের মজুদ কমে যাওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি জ্বালানির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে চাল পরিবহনে ট্রাক ভাড়াও বেড়েছে।
চাল ব্যবসায়ী মো. কুদ্দুস জানান, ৫০ কেজি ওজনের ৩২০-৩৩০টি বস্তা পরিবহনে সক্ষম একটি ট্রাকের ভাড়া ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বেড়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দিনাজপুরের ২০ হাজার টাকার স্থলে ২৫ হাজার ৭০০ টাকা, নওগাঁর ১৬ হাজার টাকার স্থলে ১৮-২০ হাজার টাকা, রংপুরের ১৮ হাজারের স্থলে ২০ হাজার টাকা ট্রাকভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীতে ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে প্রতি কেজি ২৪ টাকায় সিদ্ধ চাল বিক্রি করা হচ্ছে। জনপ্রতি পাঁচ কেজি চাল দেওয়া হয় স্বাক্ষর বা টিপসই নিয়ে।
মেসার্স মনসা স্টোরের নুরুল ইসলাম চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মূল্যের দামবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারতের অনুকরণে আমাদের দেশেও উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি পর্যায়ে সরকারি নজরদারি বৃদ্ধি করা উচিৎ।’
চিনি, ডাল, আদা ও রসুন :
পাইকারি বাজারে চিনির বাজারে তেজিভাব দেখা দিয়েছে। বেড়েছে ডাল, আদা ও রসুনের দাম। কমেছে পেঁয়াজের দাম।
আলতাফ অ্যান্ড ব্রাদার্সের মো. ফারুক জানান, গত সপ্তাহের এস আলম ব্রান্ডের চিনি প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার টাকা। সোমবার ওই চিনি ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩০ টাকা।
মেসার্স আকবর অ্যান্ড ব্রাদার্সের সুকুমার সরকার ও মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরী জানান, সিটি গ্রুপের তীর ব্রান্ডের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭৪০ টাকা।
এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় চিনি সোমবার ২ হাজার টাকা এবং থাইল্যান্ডের চিনি ২ হাজার ১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে পাইকারি বাজারে।
সোমবার চাক্তাইয়ের মেসার্স মুনির ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মুনির আহমদ জানান, চায়না রসুন পাইকারিতে প্রতিকেজি ৬২ টাকা, আদা ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহে এ দুটি পণ্যের দাম ছিল যথাক্রমে ৪৬ টাকা ও ৪০ টাকা।
তবে ভারতীয় লাল পেঁয়াজের দাম ১ টাকা কমে ১৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একতা ট্রেডার্সের তরুণ দত্ত জানান, কানাডার মোটা মশুর ডাল গত সপ্তাহের চেয়ে ২ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা, অস্ট্রেলিয়ার মশুর ২-৩ টাকা বেড়ে ৫৬ টাকা, দেশি চিকন মশুর ২ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, মটর ডাল ২ টাকা বেড়ে ৩৬ টাকা, কানাডার মটর ২ টাকা বেড়ে ৩৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া অপরিবর্তিত আছে মুগডাল মোটা ৫৫ টাকা, চিকন ৮০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৫৮ টাকা, নিম্নমানের ৪৫ টাকা।
সয়াবিন :
শীতকালে সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়া, মিল থেকে সরবরাহে বিঘœ, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, পাম তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় ঘাটতি পূরণ ইত্যাদি কারণে গত বছরের শেষদিকে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছিল। কোরবানির ঈদের সময় থেকে সয়াবিনের দাম বাড়তেই থাকে। সোমবার পাইকারি বাজারে খোলা সয়াবিনের দাম কিছুটা পড়তির দিকে ছিল।
সোমবার এস আলম (মোরগ মার্কা) সয়াবিন তেলের পরিবেশক মেসার্স হাজী আবুল বশর সওদাগরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরমান বলেন, ‘পাইকারিতে আমরা ১ লিটারের বোতল ১২১ টাকা, ২ লিটার ২৩৮ টাকা, ৩ লিটার ৩৫০ টাকা ও ৫ লিটার ৫৮৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৪ হাজার ৩৫০ টাকা বিক্রি করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এলাকাভিত্তিক পরিবেশক হলেও যারাই কিনতে আসছেন সবার কাছে বিক্রি করছি।’
খাতুনগঞ্জরে বাদশা র্মাকটেরে আরএম এন্টারপ্রাইজরে র্কমর্কতা প্রবীর সরকার সোমবার দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত সপ্তাহের চেয়ে মণ প্রতি ২০ টাকার মতো কমেছে।’
তিনি জানান, এসএ গ্রুপের খোলা সয়াবিন (রেডি মাল) সাড়ে ৪ হাজার টাকা এবং মোস্তফা গ্রুপের সয়াবিন ৪ হাজার ৫৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
কয়েকজন পাইকারি বিক্রেতা সয়াবিনের বাজারে অস্থিরতার জন্য ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, শীতকালীন ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা ও মিল (পরিশোধন কারখানা) থেকে সরবরাহ কম পাওয়ার কথা জানান।
এ প্রসঙ্গে টিকে গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো সরবরাহের চেষ্টা করছি। আসলে প্রেসার বেশি।’