ওয়েস্ট ইন্ডিজই চাপে থাকবে : মুশফিক

ওয়েস্ট ইন্ডিজই চাপে থাকবে : মুশফিক

বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজই বরং চাপে থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। এর কারণ হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলটির ওপর প্রত্যাশা বেশি থাকবে বলে জানান মুশফিক। মিরপুরে প্রথম টেস্ট শুরুর আগের দিন সোমবার মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি প্রশ্নোত্তরের নির্বাচিত অংশ তুলে দেওয়া হলো :

প্রশ্ন :  এক বছর পর টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে কতটা প্রস্তুত ?

মুশফিক : অনেকদিন পর টেস্ট খেলতে নামছি বলে এটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া ওয়ানডেও খেলেছি সেই মার্চ মাসে এশিয়া কাপে। তারপরও প্রস্তুতি যে খুব খারাপ হয়েছে, সেটা বলা যাবে না। অন্যদিকে যতটা প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল, সেটুকুও যে হয়েছে, সেটাও আমি বলবো না। তবে অনেকদিন ধরে একসাথে অনুশীলন করায়, দলের সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

প্রশ্ন : দলের ব্যাটিং নির্ভরতা মূলত কার ওপর থাকবে বলে মনে করেন ?

মুশফিক : আমাদের টপ সেভেন বা টপ এইট ব্যাটসম্যানের লম্বা ইনিংস খেলার সামর্থ ও রেকর্ড আছে। সুতরাং সবাই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থাকবেন। এর ওপর আমাদের বিশ্বমানের খেলোয়াড় সাকিব বা তামিম যদি নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে এবং অন্যরা যদি কিছু কিছু অবদান রাখতে পারে, তবে ব্যাটিংয়ে কোনো সমস্যা হবে না।

প্রশ্ন : পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগের সিরিজ খেলার সময় টেস্টে ভালো করার জন্য আপনি ঘরোয়া ক্রিকেটের ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেদিক থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা কতটা উন্নতি করেছেন ?

মুশফিক : দু’এক জন বাদে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে আমাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই ভালো করেছে। যারা ভালো করতে পারে নি, অনেকদিন পর তাদের লংগার ভার্সনে খেলার অনুশীলনটা হয়ে গেছে। এরফলে নিজেদের দুর্বলতাগুলো বোঝার সুযোগ পাওয়া গেছে। ফলে কালকের ম্যাচের জন্য সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে দারুণভাবে প্রস্তুত আছে।

প্রশ্ন : টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই আপনাদের রেকর্ড সবচেয়ে ভালো, এই ব্যাপারটা বাড়তি কোনো অনুপ্রেরণা যোগাবে কি-না ?

মুশফিক : অবশ্যই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে মিরপুরে আমরা একটা টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ম্যাচ জিতেছিলাম এবং সেবার একটা টেস্টে ড্র’ও হয়েছিল। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এবারের দলটা আরও বেশি ব্যালেন্সড ও গোছানো। তারপরও আমাদের খেলোয়াড়েরা অনেক প্রতিভাবান এবং সাম্প্রতিক সময়ে অনেক উন্নতি করেছে। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা হয়তো আলাদাভাবে দু’একজন খেলোয়াড় ভালো করি, কিন্তু দলগতভাবে ভালো করতে পারি না। দলগত পারফরমেন্সের উন্নয়নের জন্য এবার আমরা একটা পরিকল্পনা নিয়েছি। আশা করি সেটার সফল বাস্তবায়ন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটা ভালো ফল পাব।

প্রশ্ন : ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে আপনাদের লক্ষ্য কী ? আপনারা কী ড্র নাকি জয়ের জন্য খেলবেন ?

মুশফিক :  সত্যি কথা বলতে টেস্ট ক্রিকেটে আমরা একটা ধারাবাহিক দল হতে পারি নি। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো যত বড় প্রতিপক্ষই হোক না কেন, আমরা দিন ও সেশন ধরে ভালো খেলবো। এক্ষেত্রে দিনশেষে ফলাফল আমাদের পক্ষে বা বিপক্ষে আসবে কি-না, সেটা নিয়ে আমরা ভাববো না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আমরা পার সেশন ও পার ডে ভালো ক্রিকেট খেলবো, শতভাগ প্রচেষ্টা ঢেলে দেব। তাতে ফলাফল আমাদের পক্ষে এল কি এল না, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাব না।

প্রশ্ন :  ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি বলেছেন যে মিরপুর মাঠের আউটফিল্ড আগের মতো নেই। এক্ষেত্রে আপনার মন্তব্য কী ?

মুশফিক : হ্যাঁ, এটা ঠিক যে মাঠটা আর আগের মতো নেই। তবে এই মাঠে যদি ওদের (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) সমস্যা হয়, তবে আমাদেরও হবে। আসলে আমরা মাঠ নিয়ে ভাবছি না। খেলার দিকেই পুরো মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন : ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস ও স্পিন অ্যাটাকের বিপক্ষে আপনারা কতটুকু কি করতে পারবেন ?

মুশফিক : ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস, স্পিন বা ব্যাটিং, যেটার কথাই বলেন না কেন, সবগুলো বিভাগই খুব ভালো। তবে এই চ্যালেঞ্জটা যদি আমরা নিয়ে ভালো করতে পারি এবং ওদের বিপক্ষে যদি বেশকিছু রান পাই, তবে আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও অনেক বেড়ে যাবে। গত বছর ওদের এবং পাকিস্তানের বিপক্ষেও আমরা ভালো করেছিলাম। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে, শুধু সেটার বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রশ্ন : হোম সিরিজ হওয়ার ক্ষেত্রে উইকেট কেমন চাচ্ছেন ?

মুশফিক : ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল সবদিকেই ভারসাম্যপূর্ণ। সুতরাং যে-উইকেট করা হোক না কেন, ওদের খুব বেশি সমস্যায় ফেলানো যাবে না। কাজেই আমাদের লক্ষ্য থাকবে উইকেট যেমনই হোক, আমাদের সেরা পারফরমেন্স উপহার দেওয়া।

প্রশ্ন : টিম কম্বিনেশনটা কেমন হবে ? কতজন পেসার খেলাবেন ?

মুশফিক : এখনো উইকেটের কাজ চলছে। কাল সকালে উইকেটের পরিস্থিতি দেখে আমরা টিম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেব।

প্রশ্ন : সাধারণত প্রতিটা ম্যাচেই সাকিবের প্রতি খুব চাপ পড়ে যায়। এই সিরিজেও সেটা ঘটবে কী-না ?

মুশফিক : নিঃসন্দেহে সাকিব আমাদের সেরা ক্রিকেটার। ও ভালো করেই জানে ওর ব্যাটিং ও বোলিং দলের জন্য যেমন, তেমনি ওর নিজের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন। তারপরও আমরা চাচ্ছি ওর ওপর যেন খুব বেশি চাপ পড়ে না যায়।

প্রশ্ন : প্রতিপক্ষ বড় জুটির দিকে এগিয়ে গেলে, সাধারণত দেখা যায় বাংলাদেশের মনোবল খুব তাড়াতারি ভেঙ্গে যায়। এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য আপনারা কিছু করছেন কী-না ?

মুশফিক : এটা আমাদের একটা বড় দুর্বলতা। অনেক সময় দেখা যায় কোনো ব্যাটসম্যান আমাদের কাছ থেকে লাইফ পেয়ে যায় বা আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত তার পক্ষে যায় এবং ওই ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস গড়ে ফেলে। এক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করবো একটা সেশন উইকেটশূন্য থাকলে, পরের সেশনে বেশি উইকেট নিয়ে সেই গ্যাপটা পূরণ করার।

প্রশ্ন : ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় দিয়ে আপনার অধিনায়কত্ব শুরু হয়েছিল। সেই স্মৃতি ধরে রেখে এবারও ওদের হারাতে পারবেন কী-না ?

মুশফিক : ওই সিরিজটায় আমরা বেশ ভালো খেলেছিলাম। তবে এবার কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ একটা ভিন্ন দল। ওদেরকে হারানো সহজ হবে না। ভিন্ন ফরমেট হলেও ওরা কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ান। সেজন্য ওরাও চাপে থাকবে। ওরা আমাদের বিপক্ষে কোনোমতেই হারতে চাইবে না। সেদিক থেকে আমরাও অনেক এগিয়ে থাকব।

প্রশ্ন : ক্রিস গেইলকে নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা আছে কী-না?

মুশফিক : অবশ্যই। গেইল ওদের সেরা ব্যাটসম্যান। তবে মারলন স্যামুয়েলস ও শিবনারায়ণ চন্দপলও অসাধারণ ফর্মে আছেন। এই তিন ব্যাটসম্যানকে আটকানোর জন্য আলাদা পরিকল্পনা আমাদের আছে।

প্রশ্ন : টেস্ট ক্রিকেটে ১২ বছর পরও শূন্য পয়েন্ট নিয়ে আমরা র‌্যাংকিংয়ের তলায় পড়ে আছি। সেক্ষেত্রে এই সিরিজটা বাংলাদেশের টেস্ট সামর্থ প্রমাণের জন্য কী-না ?

মুশফিক : আসলে আমরা বছরে দুইটা বা তিনটা টেস্ট খেলি। এতে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। ফলে আমাদের ওপর একটা বাড়তি চাপ পড়ে। আমরা যদি আরও বেশি ম্যাচ খেলতে পারতাম, তবে আরও তারাতারি মানিয়ে নিতে পারতাম। এবার সামনে আমাদের ছয়-সাতটা টেস্ট ম্যাচ আছে। সুতরাং এবার যদি আমরা ভালো করতে পারি, তবে সামনের ম্যাচগুলোর চ্যালেঞ্জটা আমরা ভালোভাবেই নিতে পারব।

প্রশ্ন : সম্ভাব্য কোন ফলাফল এই সিরিজে আশা করছেন ?

মুশফিক : ৫ দিনের ম্যাচ হওয়ায় আমাদের লক্ষ্য দুটো বা তিনটি দিন খেলায় প্রাধান্য ধরে রাখা। সেটা যদি আমরা করতে পারি, তবে যে-কোনো ফলাফলই হতে পারে।

খেলাধূলা