পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে মিথ্যাচার বন্ধে তৎপরতা বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এরই ধারাবাহিকতায় কোনো কোম্পানি যাতে প্রসপেক্টাসে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন করতে না পারে সে জন্য এ সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে প্রস্তাব দিবে সিএসই। প্রসপেক্টাসে ভুয়া বা অতিরঞ্জিত তথ্য দিলে আইপিও আবেদন বাতিলের সুযোগ রেখে চলতি সপ্তাহের মধ্যে সিএসইর পক্ষ থেকে এসইসিতে একগুচ্ছ প্রস্তাব জমা দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আইপিও আবেদনে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কোম্পানি, পরিচালনা পর্ষদ, ইস্যু ম্যানেজার, আন্ডার রাইটার, হিসাব নিরীক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আর্থিক দন্ড ছাড়াও অন্তত এক বছরের জন্য লাইসেন্স স্থগিত বা পুরোপুরি বাতিলের ব্যবস্থা রাখারও সুপারিশ করবে সিএসই। এছাড়া আইপিও আবেদন বাতিলের পরবর্তী এক বছর কোম্পানি কর্তৃক নতুন করে আবেদন করার সুযোগ রহিত করার সুপারিশও করা হবে।
জানা যায়, সম্প্রতি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও আইপিও আবেদনে মিথ্যা বা ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেয়ার বিষয়টি রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (এসইবিআই)। অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে আইপিও আবেদন করার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ভারতের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত অক্টোবরে আইপিও আবেদন বাতিলের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রেও একই সমস্যার কারণে আইপিও আবেদন বাতিলের প্রস্তাব করবে সিএসই।
এদিকে এসইসির বিদ্যমান আইনে আইপিও আবেদন বাতিলের সুযোগ নেই। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হলে আইপিও প্রস্তাব ফেরত প্রদানের সুযোগ আছে। এরপরও প্রসপেক্টাসে (কোম্পানি সংশ্লিষ্ট তথ্যবিবরণী) অসত্য তথ্য প্রদান করে অনেক কোম্পানি। এ অভিযোগে গত ২৯ মে অ্যাপোলো ইস্পাত কোম্পানির আবেদন বাতিল করেছিল এসইসি। এমনকি কোম্পানি, ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ টাকা করে এবং সম্পদ পুনর্মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখসহ মোট ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অনুমোদন পাওয়া আইপিও নিয়ে অনেক অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। সত্য বা মিথ্যা যাই হোক না কেন, এসব অভিযোগ প্রমাণ করে যে, মানুষের মধ্যে আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ও অবিশ্বাস রয়েছে। তাই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। যতটা সম্ভব জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ করতে হবে। আইপিও মূল্য নির্ধারণ নিয়ে সিএসই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করেছে। বিশেষ করে আইপিও অনুমোদনের আগের সর্বশেষ ৩ বা ৪ বছরে কোম্পানির মুনাফা হঠাৎ বেড়ে যায়। অধিক প্রিমিয়াম পেতে ও আইপিও আকর্ষণীয় করতে কোম্পানিগুলো আর্থিক হিসাবে গরমিল করে। এটা বড় ধরনের অপরাধ। এজন্য কেবল আর্থিক দন্ড নয়, প্রয়োজনে জেল ও কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করার মতো বিধান চালু করা উচিত ।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, সরকারের প্রভাবশালী মহলের তদবিরে একের পর এক আইপিও’র অনুমোদন দিচ্ছে এসইসি। এমনকি অত্যধিক প্রিমিয়ামে আইপিও অনুমোদন দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া কোম্পানির সম্পদ ও শেয়ার ধারণ সর্ম্পকিত অত্যন্ত সংবেদনশীল তথ্য প্রদান করতে না পারার পরও বেশ কয়েকটি কোম্পানির আইপিও আবেদন অগ্রাহ্য না করারও ঘটনা ঘটেছে। কোম্পানিগুলোকে আর্থিক হিসাব ঠিক করে আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক আবেদনকারী কোম্পানির বিষয়ে তথ্যভিত্তিক মূল্যায়ন প্রদান করা হলেও তা আমলে নিচ্ছে না এসইসি। তাই আইপিও’র আবেদন বাতিল করার সুযোগ রাখতে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধনের জন্য যে প্রস্তাব রাখা হবে তা আদৌ আমলে নেয়া হবে কিনা তা ভাববার বিষয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।