লোকসানে চলছে অধিকাংশ এক্সচেঞ্জ হাউজ

বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অধিকাংশ এক্সচেঞ্জ হাউজ লোকসানে চলছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২৬টি এক্সচেঞ্জ হাউজের মধ্যে ২৩টিই লোকসান গুণছে বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর (২০১১) অনুমোদন পাওয়ার পরও ৬০টি এক্সচেঞ্জ হাউজ এখন পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে কাজ শুরু করতে পারেনি। তবে ৩ বছরের মধ্যে কাজ শুরু করতে না পারলে অনুমোদন বাতিল হয়ে যাবে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন দেশে এক্সচেঞ্জ হাউজ খুলে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অপরদিকে বর্তমানে বিদেশে বেসরকারি ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউজের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় প্রতিযোগিতায় টিকতে এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে বেশি দামে বিদেশি মুদ্রা কেনার ফলে অনেক এক্স”েঞ্জ হাউজ লোকসান গুণছে।

অন্যদিকে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা এবং লোকসানের আশংকায় নতুন অনুমোদনপ্রাপ্ত হাউজগুলো কাজ শুরু করছে না বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন। এ বিভাগের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সোনালী ব্যাংক যুক্তরাজ্যে ১৯৯৯ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২০০০ সালে এক্সচেঞ্জ হাউজ প্রতিষ্ঠা করে। ২০০১ সালে ইতালিতে কাজ শুরু করে জনতা ব্যাংক ও সিঙ্গাপুরে অগ্রনী ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউজ।

প্রাইম ব্যাংক ২০০৫ সালে বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউজের কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৬ সালে অগ্রনী ব্যাংক মালয়েশিয়ায়, ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় ন্যাশনাল ব্যাংক, ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যে এক্সিম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, পুবালী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, কানাডায় ও ইতালিতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রে এক্সিম ব্যাংক, সিঙ্গাপুরে ন্যাশনাল ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউজ কাজ শুরু করে।

আর ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যে ব্যাংক এশিয়া, এবি ব্যাংক, গ্রীসে ন্যাশনাল ব্যাংক, যুক্তরাজ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও সাউথ ইস্ট ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউজ কাজ শুরু করে।

যুক্তরাজ্যে ২০১১ সালে ব্র্যাক ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউজ কাজ শুরু করে।

আগের তুলনায় একচেঞ্জ হাউজের সংখ্যা বাড়লেও বর্তমানে অধিকাংশ হাউজ লোকসানে চলছে। বর্তমানে অনেক মানি ট্রান্সফার কোম্পানি আছে যেগুলো খুব দ্রুত টাকা আনা নেয়া করে থাকে। তাদের চার্জও খুব বেশি নয়। এজন্য অনেকে এসব কোম্পানির মাধ্যমে তাদের কাজ পরিচালনা করে।

এদিকে এক্সচেঞ্জ হাউজ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেশি টাকায় বৈদেশিক মুদ্রা কিনছে। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। গ্রাহকরা বেসরকারি ব্যাংকের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন বেশি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মাসুদ বিশ্বাস বলেন, অনেকেই ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় ৩ বছর কোনো লাভ করতে পারবে না বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছিল। আর যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছে এবং সেখানে বিদেশিদের এক্সচেঞ্জ হাউজ কিনে নিয়েছে তারাই লাভের মুখ দেখেছে।

এছাড়া সৌদি আল-রাজিসহ পরিচিত আরো দু’টি ব্যাংক রেমিটেন্সের ব্যবসা করে থাকে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে। বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক মানি ট্রান্সফার কোম্পানিগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে অল্প খরচে অর্থ পাঠাচ্ছে। এ কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক্স”েঞ্জ হাউজগুলো। এছাড়া অনেকেই বেশি দামে বৈদেশিক মুদ্রা কিনছে। তবে ধীরে ধীরে এ সমস্যা কেটে যাবে বলে বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের এ কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন।

অর্থ বাণিজ্য