রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করার পর পুলিশ যাতে গুলি চালাতে বাধ্য হয় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য ছাত্র-শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর হাই কমান্ডের নির্দেশ ছিল- পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ও আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবনন্দীতে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন গ্রেফতার হওয়া শিবির কর্মীরা।
ওই নির্দেশনা মোতাবেক গত মঙ্গলবার বিকেলে মিছিল বের করেই সরাসরি পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। আর সেই দিনের হামলায় অংশ নেওয়া শিবির ক্যাডাররা পুলিশের গতিবিধি সম্পর্কে আগাম তথ্য পাচ্ছিলো মোটরসাইকেলে থাকা ক্যাডারদের কাছ থেকে।
রাজশাহীতে গ্রেফতার হওয়া শিবিরকর্মীরা রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এ ধরণের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মহানগর পুলিশ কমিশনার এসএম মনির-উজ-জামান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, গত মঙ্গলবার পুলিশকে টার্গেট করে শিবির কর্মীরা বিক্ষোভ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে মহানগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডি এলাকার ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে শুক্রবার গভীর রাতে ১২টি তাজা বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ নূরুল হুদা নামের এক শিবির ক্যাডারকে আটকের পর শনিবার মহানগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও ১৩ জনকে আটক করে।
এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ১১ জন ও মতিহার থানা এলাকা থেকে ২ জনকে আটক করা হয়।
অপরদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আটক শিবিরকর্মী নূরুল হুদা গত মঙ্গলবার মহানগরের সাহেব বাজারে পুলিশের ওপর হামলায় অংশ নেওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন।
তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক কাজে ব্যবহারের জন্য মহানগরের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক বোমা মজুদ করা হয়েছে। তবে আর কোথায় কোথায় বোমা রাখা হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।
মহানগর পুলিশ কমিশনার মনির-উজ-জামান জানান, নূরুল হুদা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, পুলিশ যেন তাদের ওপর গুলি চালায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দলের হাই কমান্ডের নির্দেশ ছিল। সেই নির্দেশ অনুযায়ী গত মঙ্গলবার সাহেব বাজার এলাকায় তিন দিক থেকে মিছিল বের করে সরাসরি পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়।
তিনি আরও জানান, হামলার জন্য প্রায় এক হাজার বহিরাগত নেতাকর্মীকে রাজশাহীতে নিয়ে আসা হয়েছিল। এদের মধ্যে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশ পেটানো তুহিনসহ দুইজন ছিল হামলার দায়িত্বে। এছাড়া রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দীতেও শিবির ক্যাডাররা একই ধরণের তথ্য দিয়েছে বলে জানান তিনি।
মহানগর পুলিশ কমিশনার আরও জানান, ইস্যু তৈরির করার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল একটি লাশের। এজন্য দলের হাই কামান্ড থেকে শিবির ক্যাডারদের পুলিশের ওপর আতর্কিত হামলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার মহানগরের সাহেব বাজার এলাকায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
তবে বর্তমানে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।