মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে বিভিন্ন রকম সুখবর থাকলে ও আপাতত সুখবর নেই এদেশের মহিলা শ্রমিকদের জন্য। কারণ, প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে যে সকল সেক্টরে কাজের জন্য শ্রমিক চেয়েছে সেগুলোর জন্য মহিলা শ্রমিকরা উপযুক্ত নয়। এজন্য আপাতত তাদের জন্য মালয়েশিযাতে কোন সুযোগ থাকছে না।
জানা যায়, কৃষি(এগ্রিকালচার), বৃক্ষায়ন(প্লানটেশন), উৎপাদন(ম্যানুফ্যাকচারিং), নির্মাণ এবং সেবা(সার্ভিস) এই পাঁচটি কাজে লোক নিতে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া। এছাড়া মাছ ধরার জন্য জেলেও নেওয়া হতে পারে।
এদের মধ্যে সেবা(সার্ভিস) ছাড়া বেশীর ভাগ কাজের জন্যই পুরুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এজন্য আপাতত মহিলা শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হচ্ছেনা। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত মালয়েশিয়াতে আনুষ্ঠানিকভাবে মহিলা শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়নি। কারণ, আমাদের দেশের মহিলা শ্রমিকরা মুলত: যে তিনটি কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে যায় সেসব কাজের জন্য মালয়েশিয়া এখনো লোক চায়নি। তবে এবার সেখানকার শ্রম বাজার খোলার পর মহিলা শ্রমিকদের ব্যাপারেও সুসংবাদ থাকবে বলে আশা করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক এসোসিয়েশনের পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, লেবানন, জর্ডানসহ বিশ্বের অনেক দেশে এখন আমাদের মহিলা শ্রমিকরা কাজ করে। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার বন্ধ থাকায় সেখানে ব্যাপকভাবে সে ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। আর এখন যখন বন্ধ থাকা সে বাজার খুলতে যাচ্ছে তখনও সে সুযোগ থাকছে না। কারণ, আমাদের দেশের মহিলারা মুলতঃ নার্সিং, গার্মেন্টস এবং গৃহশ্রমিক এ তিনটি কাজে বিদেশ যায়। মালয়েশিয়া এসব কাজে লোক চায়নি। তারা যে কাজে লোক নিচ্ছে সেসব কাজ মহিলাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘যে পাঁচ ধরনের কাজের জন্য মালয়েশিয়া শ্রমিক চেয়েছে, সেগুলোতে মহিলা শ্রমিকদের সুযোগ কম। এগুলো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টের কাজ। তবে বলতে গেলে আপাতত মহিলাদের জন্য মালয়েশিয়াতে কোন সুযোগ নেই। চূড়ান্ত চুক্তির পরে মালয়েশিয়া লোক মহিলা শ্রমিক চাইলে তাদের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বাড়তে পারে রেজিস্ট্রেশনের সময়: মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুরা অনলাইনে নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। প্রথমে নিবন্ধনের জন্য একদিন সময় নির্ধারনের কথা ভাবা হলেও পরে তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে তিন থেকে সাত দিন সময় দেওয়া হতে পারে।
এ ব্যাপারে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমদ খান বলেন, ‘নাম নিবন্ধনের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে একদিন সময় দেয়ার চিন্তা করা হলেও তা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এখনো ইন্টারনেট সহজপ্রাপ্য নয়। তারা যাতে মফস্বলে বা জেলা শহরে যেয়ে নিবন্ধন করতে পারে সেজন্য তিন থেকে সাতদিন পরর্যন্ত সময় বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে।’
থাকছে জেলা কোটা: মালয়েশিয়াতে সরকারিভাবে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে এবার জেলা, উপজেলা কোটা রাখা হয়েছে। নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও তা মানা হবে। জেলা বা উপজেলাগুলোর কোটা পুরণ হয়ে গেলে সে সংক্রান্ত তথ্য সয়ংক্রিয়ভাবে পর্দায় ফুটে উঠবে। এক্ষেত্রে আগ্রহীদের অপেক্ষা করতে হতে পারে আরো ছয়মাস। কারণ, সরকার আশা করছে ছয় মাস পরপরই লোক পাঠানো যাবে। তবে এখনো পর্যন্ত সবকিছু নির্ভর করছে চুক্তি বাস্তবায়নের উপর।
ড. জাফর আহমেদ খান জানান, ‘দেশের সব জেলার মানুষের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে কোটার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যেক জেলা থেকে কতজন শ্রমিক যেতে পারবেন তা নির্ভর করছে মালয়েশিয়া কত লোক নিবে তার উপর।’
সাক্ষাৎকার গ্রহণ জেলা টিটিসিতে: মালয়েশিয়া যেতে নিবন্ধনের জন্য আলাদা কোন ঠিকানা নয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে নির্দিষ্ট ফরমটি। নিবন্ধনের পর একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা দেওয়া হবে যাতে প্রার্থীর সাক্ষাৎকারের তারিখ দেওয়া জানিয়ে দেওয়া হবে। আর এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে জেলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে(টিটিসি)। তবে যেসকল জেলায় টিটিসি নেই সেসব জেলার প্রার্থীদেরকে পার্শ্ববর্তি জেলার টিটিসিতে ডাকা হবে। একইভাবে জেলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বুথ থাকবে। সাক্ষাৎকারের পর চূড়ান্তভাবে বাছাইকৃতদের এসব কেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।
থাকবে ১০ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ: স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর চূড়ান্তভাবে বাছাইকৃত শ্রমিকদের জন্য ১০ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে সেটা কোন টেকনিক্যাল বিষয়ে নয়। মালয়েশিয়ার ভাষা, সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে এই প্রশিক্ষণে। সেদেশর আইন সম্পর্কিত পুস্তিকাও বিতরণ করা হবে। এরপরই তারা যেতে পারবে মালয়েশিয়ায় নিজ নিজ কর্মস্থলে। তবে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ না দিয়ে শ্রমিকদের পাঠানো ফলাফল খারাপ হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ সচিব বলেন, ‘কৃষি, বৃক্ষরোপনসহ যেসব কাজে লোক পাঠানো হচ্ছে সেসব কাজে বাঙালিরা স্বভাবই দক্ষ। এজন্য আলাদা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে না।’
সচিব আরো জানান, চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার আগে মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে এসব পরিকল্পনাসহ কিছু কাজ এগিয়ে রাখছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মালয়েশিয়ার চাহিদার অনুযায়ী। অর্থাৎ সবকিছু নির্ভর করছে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ওপর।