একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার মতো ঘটনাগুলো পেছনে ফেলে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রত্যাশা করছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার।
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথ ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বিচারের যে দাবি উঠে, ৪১ বছর পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি তা তুলে ধরলে এই প্রতিক্রিয়া আসে।
পাঁচ ঘণ্টার সফরে শুক্রবার সকালে ঢাকায় আসা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দীপু মনি হত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন।
এর জবাবে হিনা রাব্বানি অতীত ভুলে সামনে তাকানোর আহ্বান জানিয়েছেন বলে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস জানিয়েছেন।
শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকায় পা রাখা হিনা রাব্বানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীপু মনির সঙ্গে আধা ঘণ্টা বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যান।
উন্নয়নশীল আট দেশের জোট ডি-এইট সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন তিনি। আগামী ২২ নভেম্বর ইসলামাবাদে ডি-এইটভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মেলন শুরু হচ্ছে।
পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের আকাক্সক্ষা দমিয়ে রাখতে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো গণহত্যায় নিহত হন ৩০ লাখ মানুষ, ধর্ষিত হন অসংখ্য নারী।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নির্বিচার হত্যাকাণ্ড শুরু হলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি, নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামের পর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে।
মিজারুল কায়েস বলেন, “তিনি (হিনা রাব্বানি) ’৭১ এর রেফারেন্স তুলে বলেছেন, ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়গুলো এক পর্যায়ে আসবে।
“তিনি বলেছেন, ’৭৪ এর পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে তারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন।”
গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়াসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের ওপর জোর দেন দীপু মনি।
“আমরা বলেছি, আনরিজলভড বিষয়গুলো মীমাংসা করে সামনের দিকে এগোতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, পাকিস্তান এগিয়ে আসবে,” বলেন সচিব।
“তারা (পাকিস্তান) মনে করেন, পেছনটা ফেলে সামনের দিকে তাকানো উচিত।”
তবে সংক্ষিপ্ত বৈঠক বলে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ ছিল না বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান।
শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় বিশেষ একটি ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সেখান থেকে সেগুন বাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান তিনি। সোয়া ১১টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত বৈঠকের পর গণভবন যান তিনি।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিকালে ঢাকা ছাড়েন হিনা রাব্বানি।
বর্তমান সরকারের আমলে এই প্রথম পাকিস্তানের কোনো মন্ত্রী বাংলাদেশে এলেন। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর হিনার ঢাকায় আসার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে যায়।
বর্তমান সরকারের মেয়াদে গত চার বছরে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশের শিক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রী ইসলামাবাদ সফর করেছেন। সম্প্রতি পাকিস্তান সফরে যান স্পিকার আবদুল হামিদ। এছাড়া ২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়।