টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যুগপূর্তি

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যুগপূর্তি

শনিবার টেস্ট ক্রিকেটের এক যুগে পর্দাপন করছে বাংলাদেশ। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের। এক যুগ পরে পেছন ফিরে তাকালে রেকর্ডের খেরোখাতায় সাফল্য-ব্যর্থতার মিশ্র অনুভূতি ধরা পড়ে।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট দল হিসেবে বাংলাদেশের অভিষেকটা হয়েছিল দারুণ। টসে জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে তুলেছিল ৪০০ রান। প্রথম ইনিংসে প্রায় দুই দিন ব্যাট করেছিল বাংলাদেশ। অভিষেক টেস্টেই আমিনুল ইসলাম খেলেছিলেন ১৪৫ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস। অধিনায়ক নাইমুর রহমান প্রথম ইনিংসেই নিয়েছিলেন ভারতের ৬ উইকেট।

তবে দ্বিতীয় ইনিংসে এসে খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯১ রানে অলআউট হলে ৯ উইকেটের জয় পায় সফরকারী ভারত। কিন্তু তারপরও অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের এমন লড়াকু হার প্রশংসা আদায় করে পুরো ক্রিকেটবিশ্বের।

এক যুগ আগে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলতে পারাকে নিজেদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক আকরাম খান ও হাবিবুল বাশার সুমন।

অভিষেক টেস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আকরাম বলেন,‘ টেস্ট খেলার স্বপ্ন সবারই থাকে। দেশের অভিষেক টেস্ট দলের একজন সদস্য হিসেবে গর্ববোধ করি। প্রথম টেস্টে খেলার  অনুভূতির কথা বলে বোঝানো যাবে না। এটা অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।’

প্রায় একই রকম অনুভূতি হাবিবুল বাশারেরও। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭১ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০ রান করা ব্যাটসম্যান বলেন, ‘প্রথম টেস্ট খেলতে নামার অনুভূতি সম্পূর্ণ আলাদা। অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে এর তুলনা চলে না। আমার জন্য ব্যাপারটি আরো আলাদা, কারণ অনেক যুদ্ধ করে অভিষেক টেস্টের দলে আমাকে জায়গা করে নিতে হয়েছিল। সেই টেস্টের পরে আরো অনেক টেস্ট খেলেছি। কিন্তু দেশের অভিষেক টেস্ট খেলার সেই সুখকর অনুভূতি কখনো ভুলে যাবার নয়।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা প্রথম টেস্টেই যে আলোর ঝলকানি দেখিয়েছিল, সেই আলো মিয়ম্রান হতে দেরি হয় নি। তবে শুরুর দিকে এ রকম রেকর্ড প্রায় সব টেস্ট দলেরই আছে। এই পর্যন্ত ৭৩টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৩টি জয়, ৭টি ড্র ও বাকি ৬৩ ম্যাচে হেরেছে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট খেলুড়ে দেশটি।

অভিষেক টেস্টেই চমক সৃষ্টি করে তা ধরে না রাখতে পারা সম্পর্কে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রানের মালিক বাশার মনে করেন এর কারণ শুরুতেই বাংলাদেশের ওপর অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপ।

‘রেকর্ডবুকে চোখ রাখলে স্বীকার করতেই হবে যে গত এক যুগে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য পায় নি বাংলাদেশ। এর কারণ হতে পারে প্রথম টেস্টেই আমরা প্রত্যাশার অতিরিক্ত পারফরমেন্স দেখিয়েছিলাম। যেটা পরবর্তীতে আর ধরে রাখা সম্ভব হয় নি।’ বলেন বাশার।

এখন পর্যন্ত টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে হাবিবুল বাশারের সবচেয়ে বেশি রান (৩০৩৬) টপকে যেতে পারেন নি কেউই। এর কারণ হিসেবে বাশার বললেন, ‘এক আশরাফুল ছাড়া অন্যরা আমার মতো এতদিন টেস্ট খেলার সুযোগ পায় নি। আশরাফুলের সুযোগ ছিল আমাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।’

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশকে মর্যাদাকর স্থানে যেতে হলে আরও বেশি করে টেস্ট ম্যাচ খেলতে হবে বলে উল্লেখ করেন বাশার। কম টেস্ট খেলা বাংলাদেশের সাফল্যের রেকর্ড ভারী না হওয়ারও একটা কারণ বলে মনে করেন তিনি। ‘বছরে যদি অন্তত ১০টি টেস্ট খেলা সম্ভব হত, তা হলে মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট আরো একটু উপরেই থাকত।’

তবে দলগত সাফল্য না পেলেও অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার বের হয়ে এসেছে বলে মনে করেন তিনি। ‘তামিম, সাকিব, মুশফিকের মতো ক্রিকেটাররা একসঙ্গে ভালো খেললে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ অনেক সাফল্য পাবে। ওদের পাশাপাশি অনেক তরুণ ক্রিকেটারও উঠে আসছে। ওরাই আমাদের দেশের ক্রিকেটকে অনেকদূর নিয়ে যাবে।’

খেলাধূলা