সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমলেও বেড়েছে সাধারণ মূল্য সূচক। ফলে ডিএসই’র মূল্য সূচক নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
তাদের অভিযোগ, সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর কমলেও কারচুপির মাধ্যমে মূল্য সূচক ধনাত্মক দেখানো হয়েছে। অথবা সূচক গণনায় ভুল করা হয়েছে।
তবে ডিএসই কর্তৃপক্ষ বলছে, সূচক গণনায় ভুল অথবা কারচুপি করা হয়নি। সঠিক পদ্ধতিতেই সূচক গণনা করা হয়েছে এবং সঠিক সূচক দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই’র সভাপতি মো. রকিবুর রহমান বলেন, ‘আই অ্যাম টোট্যালি কনফিউজড’।
রকিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, ঈদের পর থেকে বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আজকের বাজার চিত্র খুবই চিন্তিত হওয়ার বিষয়। তিনি আরো জানান, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে বাজারে। তবে বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষে যা যা করণীয় তা থেকে এক পাও সরে দাঁড়াবো না।
ডিএসই’র বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দিনের লেনদেন শেষে ১৭৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর কমেছে। আর বেড়েছে ৭৪টি কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর।
দর বৃদ্ধির কোম্পানির তুলনায় প্রায় ৩গুণ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর কমেছে। তারপরও ডিএসই’র সাধারণ মূল্য সূচক বেড়েছে ৩ পয়েন্ট। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক প্রকার বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।
এ বিষয়ে একাধিক বিনিয়োগকারী শেয়ারনিউজ২৪ডটকমের অফিসে ফোন করে অভিযোগ করেন, কারচুপির মাধ্যমে ডিএসই আজকের সূচক ধনাত্মক দেখিয়েছে। আবার অনেকে অভিযোগ করেন যান্ত্রিক ক্রটি অথবা ডিএসই’র সূচক গণনায় ভুল করেছে।
এদিকে ডিএসই’র দায়িত্বশীলদের দাবি, যদি কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বেশি হয় এবং শেয়ারের লেনদেনযোগ্য অংশ বেশি হয় তবে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বাড়লে মূল্য সূচক বেশি বাড়ে। আর কম পরিশোধিত মূলধনের লেনদেনযোগ্য শেয়ার কম থাকলে ওই কোম্পানির শেয়ার দর পড়ে গেলেও সূচকে খুব একটা প্রভাব পড়ে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসই’র এক কর্মকর্তা শেয়ারনিউজ২৪ডটকমকে বলেন, বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমলেই সূচক ঋণাত্মক হবে এ ধারণা ঠিক নয়। সূচক ওঠানামায় বেশি প্রভাব ফেলে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ও শেয়ারের লেনদেনযোগ্য অংশের ওপর।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের সূচকে কোনো ভুল হয়নি। যেসব কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে সেগুলোর পরিশোধিত মূলধন বেশি এবং শেয়ারের লেনদেনযোগ্য অংশও বেশি। তার মতে, যে সব কোম্পানির শেয়ারের লেনদেনযোগ্য অংশ বেশি এবং পরিশোধিত মূলধনও বেশি সেসব কোম্পানির শেয়ার দর বাড়লে সূচক বাড়বে। আর পরিশোধিত মূলধন কম ও শেয়ারের লেনদেনযোগ্য অংশ কম হলে দর কমলে সূচকে খুব একটা প্রভাব পড়ে না।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ডিএসই’র সূচক উত্থানে সব থেকে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো’র (বিএটিবিসি) শেয়ার। এদিন ডিএসই’র সূচকে প্রতিষ্ঠানটির অবদান ছিল ৮.৪৩ পয়েন্ট। এছাড়া সূচক ঊর্ধ্বমুখী রাখতে তুলনামুলক বেশি ভূমিকা রাখা প্রধান ৫টি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে, জিপি, আইসিবি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ ও ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে জিপি ৫.৭২ পয়েন্ট, আইসিবি ২.৩৩ পয়েন্ট, বার্জার পেইন্টস ২.০৩ পয়েন্ট ও ইসলামী ব্যাংক ১.৪৭ পয়েন্ট সূচকে অবদান রাখে।
অপরদিকে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হতে সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত করেছে ইউনিক হোটেল। এ প্রতিষ্ঠানটির কারণে সূচক ঋনাত্মক হয় ২.৮৪ পয়েন্ট। এছাড়া সূচকের ঊর্ধ্বমুখীতায় বাধা সৃষ্টি করা শীর্ষ ৫ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড এয়ার, ইউসিবিএল, আরএন স্পিনিং ও এমআই সিমেন্ট। এর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ার ১.৪৫ পয়েন্ট, ইউসিবিএল ১.৩৮ পয়েন্ট, আরএন স্পিনিং ১ পয়েন্ট ও এমআই সিমেন্টের কারণে সূচক কমেছে .৮৯ পয়েন্ট।