প্রদত্ত প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এবং ডিএসইর মধ্যে প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় আজ। বৈঠকে এসইসির পক্ষ থেকে ডিএসইর প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়। তবে এ ব্যাপারে এখনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি এসইসি। অপরদিকে বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার জন্য এসইসিও কতিপয় প্রস্তাবনা তৈরী করেছে বলে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান ডিএসই’র প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান।
আজ সকাল ১১টায় এসইসির সম্মেলন কক্ষে সংস্থাটির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের সভাপত্বিতে উভয় পক্ষের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রকিবুর রহমান বলেন, আমরা ৩ মাস কঠোর পরিশ্রম করে এসব প্রস্তাবনা তৈরী করেছি। এক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন স্টক এক্সচেঞ্জের সহায়তা নেয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি প্রস্তাবনাগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে প্রয়োজনীয় সংযোজন বিয়োজন করে এসইসি তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে।
রকিবুর রহমান বলেন, বাজারে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার রক্ষার্থে ডিএসই কাজ করে যাচ্ছে।
বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, কোম্পানি প্রদত্ত আর্থিক প্রতিবেদনগুলো স্বচ্ছ হলে বিনিয়োগকারীদের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়। তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
রকিবুর রহমান আরো বলেন, যদি কোনো কোম্পানি ফার্স্ট কোয়ার্টারে মুনাফা করে এবং সেকেন্ড কোয়ার্টারে লোকসান করে তবে কেন লোকসান হয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে হবে। যাতে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে কোনো অসুবিধা না হয়।
কোম্পানির উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে ডিএসইর প্রেসিডেন্ট বলেন, উদ্যোক্তারা যদি ভালো হয় তবে প্রতিষ্ঠান ভালো থাকবে। অনেক সময় খারাপ প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তাদের গুণে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে। তিনি বলেন, প্রেফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে পুনরায় মূলধন সংগ্রহ কিংবা আইপিও, বুক বিল্ডিং যে পদ্ধতিতে কোম্পানি তালিকাভুক্ত হোক না কেন তার আগে উদ্যোক্তাদের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে হবে।
এছাড়া আগামী ২১ শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বাংলায় ডিএসই’র ওয়েবসাইট চালু করা হবে বলে ডিএসইর প্রেসিডেন্ট জানান। প্রস্তাবনাগুলোর জন্য এসইসি ডিএসইকে সাধুবাদ জানিয়েছে বলেও জানান রকিবুর রহমান।
প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর ডিএসই’র পক্ষ থেকে প্রস্তাবনাগুলো এসইসি’র কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএসইর সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রয়ের নীতিমালা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির নতুন ক্যাটাগরি ‘পি’, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অর্থের ব্যবহার, প্রিমিয়াম সংক্রান্ত নীতিমালা এবং রাইট শেয়ার সংক্রান্ত নীতিমালা। সংস্কার প্রস্তাবে পাবলিক মার্কেটে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে ব্লক মার্কেটে লেনদেনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্যাটাগরিতে প্রিমিয়াম গ্রুপ বা ‘পি’ নামের নতুন একটি ক্যাটাগরি সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। যা হবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি। সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি অর্থাৎ ‘পি’ ক্যাটাগরিতে স্থান পেতে কোম্পানিকে ৪টি শর্তপূরণ করতে হবে। শর্তগুলো হলো- ৩০ শতাংশের ওপরে লভ্যাংশ দিতে হবে, এনএভিতে নেট গ্রোথ থাকতে হবে, এসইসির কর্পোরেট গভার্নেন্স গাইডলাইন পুরোপুরি মেনে চলতে হবে এবং আর্থিক প্রতিবেদন আইএএস ও আইএফআরএস অথবা বিএএস ও বিএফআরএস এর সকল নীতি মেনে তৈরি করতে।
আইপিও’র টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার বিধান বন্ধ করার জন্য সংস্কার প্রস্তাবে সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি আইপিও’র মাধ্যমে টাকা তোলার সময় কোম্পানিকে নিশ্চয়তা দিতে হবে পরবর্তী ৩ বছর আগের বছরের তুলনায় বেশি লাভ করবে।
প্রিমিয়ামে কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চাইলে কোম্পানিকে নিশ্চয়তা দিতে হবে ৬ মাসের মধ্যে শেয়ারের মূল্য ২০ শতাংশের নীচে নামবে না। যদি শেয়ারের মূল ২০ শতাংশের নীচে নামে তবে কোম্পানিকে যে কোন উপায়ে তা কিনে নিতে হবে।
রাইট শেয়ারের বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাবে রয়েছে, শুধু ইজিএম করেই রাইটের জন্য এসইসির কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা যাবে না। রাইটের জন্য আবেদন করতে হলে আগে রাইটের জন্য যে শর্ত রয়েছে তা পূরণ করতে হবে। তারপর আবেদন করতে হবে। সাধারণ বিনিয়োকারীরা রাইট শেয়ারের জন্য আবেদন করে যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সে জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে চাঁদা চাওয়ার আগেই কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের রাইটের জন্য টাকা জমা দিতে হবে।