স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবগুলোই জিততে চায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। বুধবার মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ইনডোরে এবং নেটে অনুশীলনের আগে আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন কথাই বললেন ক্যারিবিয় অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। স্যামির সেই কথপোকথনের মূল অংশের পুরোটাই তুলে দেওয়া হলো ।
প্রশ্ন : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় বাংলাদেশ সফরে আপনাদের ওপর প্রত্যাশার চাপ বাড়িয়ে দেবে কী না?
স্যামি : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। চাপের কথা যদি বলেন, তবে বলতে হয় যে-কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই যে-কোনো দলের জন্য চাপের। আমরা এখানে গতবারের মতোই জিততে এসেছি।
প্রশ্ন : গত বছরের দলটি থেকে এবারের দলটি কতটা বেশি ভালো ?
স্যামি : দল হিসেবে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। গত কয়েক বছরে আমাদের মধ্য থেকে অনেক খেলোয়াড় বেড়িয়ে এসেছে। দল হিসেবে আমরা এখন অনেক ধারাবাহিক। আমাদের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উভয় টেস্টই জিতেছি। আমরা তিনটি সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশে এসেছি।
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে আপনাদের সবচেয়ে সফল টেস্ট বোলার কেমার রোচকে এই সিরিজে পাচ্ছেন না। এই শূন্যস্থানটা কীভাবে পূরণ করবেন?
স্যামি : নিঃসন্দেহে কেমার রোচ এ বছরে আমাদের সেরা টেস্ট বোলার। তবে গত বছর বাংলাদেশ সফরে রোচের চেয়েও ফিদেল এডওয়ার্ডস বেশি ভালো করেছে। আমরা রোচের জায়গায় ফিদেলকে পাচ্ছি। এছাড়া গত সফরে কিন্তু সুনীল নারাইন দলে ছিল না। এই সফরে আমরা নারাইনকেও পাচ্ছি। এর অর্থ আমাদের দলটি দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ। আশা করি আমাদের সব বোলারই সফল হবে এবং উভয় টেস্টেই আমরা ২০ উইকেট করে নিতে পারব।
প্রশ্ন : অধিনায়ক হিসেবে গত সফরটা আপনার তেমন ভালো যায় নি। এ বছর অধিনায়ক হিসেবে আপনার ভূমিকা কতটা পরিবর্তিত হয়েছে?
স্যামি : অধিনায়ক হিসেবে আমার ভূমিকার কোনো পরিবর্তন হয় নি। সব খেলোয়াড়ের কাছ থেকেই সেরাটা আশা করা হয়। মাঠে আমাদের সব খেলোয়াড়ই ভালো পারফর্ম করবে, দল সেটাই চায়।
প্রশ্ন : প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে আপনি কেমনভাবে মূল্যায়ন করবেন?
স্যামি : বাংলাদেশকে আমরা কখনো হাল্কাভাবে নেই না। ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা সবসময়ই ভয়ংকর। গত সফরে উভয় টেস্টেই দারুণ লড়াই হয়েছিল এবং প্রথম টেস্টে তো তারা জয়ের অনেক কাছেই চলে গিয়েছিল। প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা যথেষ্ঠ সমীহ করছি। আমরা যাদের বিপক্ষেই খেলি না কেন, তাদেরকে আমরা প্রাপ্য সম্মান দেই।
প্রশ্ন : আপনাদের দলের ম্যানেজার বলেছেন যে আপনারা সবগুলো ম্যাচই জিততে চান। এটা কী অতি আত্মবিশ্বাস নয়?
স্যামি : গত কয়েক বছরে আমরা অনেক ভালো খেলছি। র্যাংকিংয়ের প্রথম সারির দলগুলোর বিপক্ষেও আমরা দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। প্রথম সারির দলগুলোকে হারানোর মতো আত্মবিশ্বাস এখন আমাদের মধ্যে আছে। র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ওপর আমাদের অবস্থান। দল হিসেবে আমাদের লক্ষ্য আছে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছি। যদিও এই সিরিজ থেকে আমরা খুব বেশি পয়েন্ট পাব না। তবে যে পয়েন্টই আমরা পাই না কেন, আমরা সেটাকে ছোট করে দেখছি না। প্রতিটি ম্যাচ জয়ের জন্য আমরা নিজেদের মধ্যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। এভাবেই আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছি। সেটা এখন অতীত। এখন আমাদের লক্ষ্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের বিশ্বাস এই সিরিজে আমরা ভালো করবো এবং এর মধ্য দিয়ে আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।
প্রশ্ন : এখনো বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করা হয় নি। সেক্ষেত্রে আপনারা এখনো প্রতিপক্ষের দল সম্পর্কে জানতে পারছেন না। বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের সম্পর্কে আপনাদের বিশেষ পরিকল্পনা আছে কী ?
স্যামি : বাংলাদেশের বেশকিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। স্কোয়াড ঘোষণা করা না হলেও আমরা আশা করি তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এদের বিপক্ষেই আমাদের খেলতে হবে। যে দলই দেওয়া হোক না কেন, আমাদের খুব ভালো এনালিস্ট (বিশ্লেষক) আছে। আমরা বাংলাদেশ দলের ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণের পর নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতেই আমাদের পরিকল্পনা প্রণয়ন করবো। মাঠে যদি আমরা আমাদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে অবশ্যই আমরা তাদের বিপক্ষে সফল হবো।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের পরিবেশে আপনাদের কতটা সাহায্য করবে?
স্যামি : বাংলাদেশের পরিবেশ অনেকটা ক্যারিবিয়ানের মতোই। আমাদের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই প্রখর রোদ এবং লো-স্লো উইকেটে খেলতে অভ্যস্থ। আমাদের দলে বিশ্বমানের স্পিনার যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে ফাস্ট বোলারও। এছাড়া আমাদের ব্যাটিং লাইন-আপও অনেক অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী। গত বছর আমাদের সঙ্গে ক্রিস গেইল ছিল না। এবার সে আমাদের সঙ্গে আছে। এছাড়া চন্দরপল এখনো একজন বিশ্বসেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান। মারলন স্যামুয়েল ভালো ফর্মে না থাকলেও, ব্রাভো, কির্ক এডওয়ার্ডসের মতো অনেক তরুণ ক্রিকেটার আছে। আমাদের যে সামর্থ আছে, তাতে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমাদের যেটা করতে হবে, সেটা হলো মাঠে প্রতিভার সবটুকু ঢেলে দেওয়া। তাহলেই আমরা সফল হবে।