আট মাসে ২৬.৭৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি

আট মাসে ২৬.৭৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি

দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকে ধারাবাহিকভাবে সফলতা আসছে। একক বৃহত্তম বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড় সফলতার পর এবার বিশ্ববাজারেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। প্রধান প্রায় সব বাজারেই পোশাক রপ্তানিতে আয় বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের জন্য দেশভিত্তিক রপ্তানি যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে সারা বিশ্বে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০.৬৪ শতাংশ। একই সময়ে সারা বিশ্বে ২৬.৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে ভালো রপ্তানি আয় অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ৫০.১০ শতাংশ যায় ইইউতে, যার মোট মূল্য ১৩.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট শেয়ারের ১৮.৯১ শতাংশ। অন্যান্য দেশের মধ্যে কানাডার বাজারে রপ্তানি হয়েছে ৮৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক এবং বাজার শেয়ার ৩.১৬ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের বাজারে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২.৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যা বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ১০.৯৪ শতাংশ।

এদিকে চলতি অর্থবছরের আট মাসে ইইউতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৫৩ শতাংশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবৃদ্ধি ১৬.৩৮ শতাংশ এবং কানাডায় প্রবৃদ্ধি ১৪.১২ শতাংশ। আর যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৩.৭৪ শতাংশ।

এ ছাড়া ইইউর অন্য দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য। দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ৩.৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এ ছাড়া স্পেনে ২.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ফ্রান্সে ১.৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ইতালিতে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, পোল্যান্ডে ১.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং নেদারল্যান্ডসে ১.৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতে ১১.৩ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ২৫.৬ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১২.৬, ডেনমার্কে ১৪.৫৮ শতাংশ এবং সুইডেনে ২১.১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তবে প্রচলিত বাজারের চেয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের নতুন বাজার বা অপ্রচলিত বাজারে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হয়েছে। নতুন বাজারে সামগ্রিকভাবে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। যা মোট রপ্তানির ৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। নতুন বাজারের মধ্যে জাপানে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৮৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের, অস্ট্রেলিয়ায় ৫৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ভারতে ৪৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া তুরস্ক এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে যথাক্রমে ৩০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। নতুন বাজারের মধ্যে প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে ভারতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ৫৮ শতংশ, মেক্সিকোতে ২৫ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং তুরস্কে ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে এই সময়কালে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, তুরস্ক এবং মেক্সিকোতে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকলেও, রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।

তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, বড় বড় বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। এ জন্য দেশগুলো থেকে নতুন রপ্তানি আদেশও বাড়ছে। এ মন্তব্য করে বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘রপ্তানির চলমান প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল, যা বাংলাদেশের প্রধান বাজার হিসেবে অব্যাহত রয়েছে। বড় বাজারগুলোতে আরো ভালো করার সুযোগ তৈরি হয়েছে মূলত মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের কারণে। দেশটি চীন ও মেক্সিকোর ওপর যে চড়া শুল্ক হার আরোপ করেছে তার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ।’

তিনি আরো বলেন, প্রচলিত বাজারের সঙ্গে নতুন বাজারেও মাঝারি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে নতুন বাজারে আরো ভালো করার সুযোগ আছে। কারণ এই বাজারে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। চলমান বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলছে। তবে এতে বাংলাদেশের সামনে যে সুযোগ তৈরি করেছে তা আমাদের গহণ করতে হবে। আমাদের প্রয়োজনীয় উৎপাদনশীল সক্ষমতা বাড়াতে হবে। একই সাথে আমাদের তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগিতামূলকতা এবং প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে শক্তিশালী এবং উন্নত করার জন্য পোশাক শিল্পের সহযোগী শিল্পের দিকেও নজর দিতে হবে।’

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর