অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। বিধিবর্হিভুত কমিশন প্রদান, ভূয়া পলিসি করা, প্রিমিয়াম আয় কম দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেয়াসহ সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তৃতীয় প্রজন্মের বেসরকারি এ সাধারণ বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমানের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, মোটর বীমার পলিসি করতে অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের বিভিন্ন শাখা। আইনে যাত্রী ও চালকের প্রিমিয়াম নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও তা না নিয়েই পলিসির সার্টিফিকেট দিচ্ছে তারা। এতে একদিকে প্রতারিত হচ্ছে গ্রাহক, অন্যদিক বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে সিএনজি অটোরিক্সার একটি পলিসি (ইআইএল/এমএলবি/এমভি/সিভি/-২০৫/০৪/২০১১) করে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মালিবাগ শাখা। এ পলিসিতে চালক ও যাত্রীর কোনো প্রিমিয়াম নেয়া হয়নি। আরেকটি পলিসি করানো হয় একই বছরের মে মাসে। পলিসি নাম্বার- ইআইএল/এমএলবি/এমভি/সিভি/-২৬৯/০৫/২০১১।
এ বিষয়ে মালিবাগ শাখা ইনচার্জ মো. আতিকুর রহমান জানান, আমার শাখা থেকে এ ধরনের কাজ হয়েছে বলে জানা নেই। তবে যাত্রী ও চালকের প্রিমিয়াম নেয়া বাধ্যতামূলক বলে জানান তিনি।
সূত্র আরো জানায়, আইনে ১৫ শতাংশ কমিশন দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা অমান্য করে কমিশন দিচ্ছে কোম্পানিটি। এক্ষেত্রে অভিনব পথ বেছে নিয়েছে তারা। একটি পলিসির বিপরীতে একাধিক ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পৃথক পৃথক অংকে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ কমিশন দিচ্ছে তারা। কমিশন প্রদানের এসব তথ্য শেয়ারনিউজে সংরক্ষিক রয়েছে।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অপর একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রিমিয়াম আয় বেশি হলেও তা কম দেখাচ্ছে বেসরকারি ওই কোম্পানিটি। গত ২০১১ সালে প্রায় ১২০ কোটি টাকা প্রিমিয়ম আয় করলেও দেখানো হয়ে ৭০ থেকে ৭৫ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে রাজস্ব ফাঁকির এ কাজটি অবলীলায় করে যাচ্ছে কোম্পানিটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমানের একক আধিপত্যে চলছে কোম্পানি। তার অনিয়মের বিরোধীতা করে একাধিক কর্মকর্তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিটি শাখা থেকেই শাখার চাহিদার চেয়েও বেশি বেতন ভাতা তোলা হয়েছে। পরে সাইদুর রহমানের নির্দেশে অতিরিক্ত টাকা প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব টাকা সাইদুর রহমান আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বীমা আইনে শাখা অফিস পরিচালনায় নিবন্ধন নেয়ার বিধান থাকলেও তা মানছে না বেসরকারি সাধারণ বীমা কোম্পানি এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। রাজধানীর ৫৮ দিলকুশায় অবস্থিত ডিআইটি এভিনিউ ব্রাঞ্চের অফিসটিতে একই সঙ্গে ইউনিট-৬ নাম দিয়ে অপর একটি ব্রাঞ্চ পরিচালনা করছে কোম্পানিটি। যদিও ইউনিট ৬ এর কোনো অনুমোদন নেই। একই স্থলে দু’টি শাখা পরিচালনা বীমা আইনে অবৈধ। অবৈধভাবে শাখা অফিস পরিচালনার এ অপকর্মটি তারা পরিচালনা করে আসছে গত প্রায় তিন বছর থেকে।
সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরের আগে একই অফিসে পরিচালিত দু’টি শাখার পলিসি ইস্যু করা হতো ভিন্ন ভিন্ন নামে। কিন্তু সম্প্রতি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তদারকি বাড়ানো কারণে অবৈধ এ অপকর্মটি করতে কোম্পানিটি বেছে নেয় নুতন কৌশল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ডিআইটি এভিনিউ শাখার নাম দিয়েই পলিসি ইস্যু করা হচ্ছে। তবে প্রিমিয়ামের টাকা জমা নেয়া হচ্ছে পৃথক দু’টি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে। এর মধ্যে ডিআইটি এভিনিউ শাখার প্রিমিয়াম জমা হচ্ছে সাউথউস্ট ব্যাংকের করপোরেট শাখায় (চলতি হিসাব নাম্বার-১৩১০০০০০৪৩৪)। অপর শাখা ইউনিট ৬ এর প্রিমিয়াম জমা হয় উত্তরা ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় (চলতি হিসাব নাম্বার ৭৩)।
সূত্র আরো জানায়, পলিসি পত্রে ডিআইটি এভিনিউ শাখার নাম ব্যবহার করা হলেও ওই দু’টি শাখার কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা দেয়া হচ্ছে পৃথকভাবে ইউনিট ৬ ও ডিআইটি এভিনিউ ব্রাঞ্চের নামে।
এ ছাড়ারও অভিযোগ রয়েছে, ইউনিট-১ থেকে ইউনিট-৫ পর্যন্ত পাঁচটি শাখা পরিচালিত হচ্ছে বিজয় নগরস্থ আল রাজি কমপ্লেক্সের ১১ তলায় অবস্থিত এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয় থেকে। আর এসব ইউনিটগুলোর প্রিমিয়াম আয় পৃথক পৃথক ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করা হলেও সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করে।
তবে এসব বিষয় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমানের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি কোম্পানিটি। অথচ কোম্পানিটি বীমা ব্যবসা করার অনুমোদন পেয়েছে প্রায় ১০ বছর আগে। এছাড়া প্রকৃত প্রিমিয়াম কম দেখিয়ে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে কোম্পানিটি।