এক লিটার পানির দরের সমান বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে দর থাকলেও বিনিয়োগকারীরা ছুটছেন উচ্চ প্রিমিয়ামের আইপিওর দিকে। এদিকে বাজার থেকে প্রিমিয়ামসহ মূলধন সংগ্রহ করে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা দুই এক বছর কোনো রকম লভ্যাংশ দিয়ে এরপর লোকসানের খাতায় কোম্পানির নাম লেখাচ্ছে। যা কৈয়ের তেলে কৈ ভাঁজার মতো। এ ধরনের কুটকৌশল থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্র্ণ এ কথা যেমন ঠিক, তেমনি যারা এ বাজারে বিনিয়োগ করেন তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা বিধান করা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। কেউ যাতে বাজারে কারসাজি করে সুবিধা নিতে না পারে প্রয়োজনীয় মনিটরিং সাপেক্ষে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব। কিন্তু দীর্ঘ ২২ মাস বাজারে থেমে থেমে ব্যাপক দরপতন ঘটছে। এতে বিনিয়োগকারীরা বারবার নতুন পুঁজি হারিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন। বাজারে এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীলতার লক্ষণ নেই। এরমধ্যে বাজারে বেশ কিছু নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। আবার বেশ কিছু কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে চাঁদা তোলার কাজ শুরু করেছে। কোনোটা এসইসি থেকে প্রদত্ত দিনক্ষনের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এসইসি কার স্বার্থে এত দ্রুত বাজারে বেশি বেশি আইপিরও অনুমোদন দিচ্ছে। বাজারে যখন নতুন কোম্পানি নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল তখন তারা কিছুই করতে পারেনি। এখন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কোম্পানি বাজার আসার জন্য পাইপলাইনে আছে। ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের পর পতনের কষাঘাতে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর পানির দরের সমান পর্যায়ে নেমে আসলেও কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই।
সম্প্রতি দেখা গেছে, সদ্য তালিকাভুক্ত কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দর অল্প সময়ের ব্যবধানে ১৫০ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ফান্ডামেন্টাল নামের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর তলানি থেকে তলানিতে শুধু নেমেছে। যা বাজারের জন্য খুবই হতাশাব্যাঞ্জক বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিস্ট এবং অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, এতে বিনিয়োগকারীরা ভালো শেয়ারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের সার্বিক দিক পর্যালোচনার মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণ জরুরি।
এ বিষয়ে সাউথইস্ট মার্চেন্ট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে শেয়ারনিউজ ডটকমকে বলেন, যে বাজারের টাকা দিয়ে কোনো কোনো ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি থেকে ৩০০/৪০০ কোটিতে উন্নিত হলো, বড় বড় কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হলো, শিল্প কলকারখানা অবকাঠামো সৃষ্টি হলো, উৎপাদনশীল খাতের উৎপাদন বাড়লো সে বাজারের প্রতি নীতি নির্ধারকদের ভূমিকা অগ্রহযোগ্য। বিনিয়োগকারীরা এ বাজারে বিনিয়োগ করে যে কতটা অসহায় অবস্থায় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে তা না দেখলে বোঝার উপায় নেই।
এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ব্যাংকসহ অন্য খাতের অনেক কোম্পানির শেয়ার দর পানির দরের সমান পর্যায়ে নামরেও আইপিওর শেয়ারের মিছিল চলছে। বিনিয়োগকারীরাও এসব আইপিওর দিকে ছুটছেন। এতে যারা আবেদন করছেন তাদের সংখ্যা যদিও বাড়ছে কিন্তু টাকা আটকে থাকছে প্রায় ২ মাস। এমতাবস্থায় বাজারে নগদ টাকার সরবরাহ বাড়ানো না গেলে ধীরে ধীরে বাজার আরো সংকুচিত হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের একাধিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের সব সময় আগ্রহ থাকে বেশি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর আচরণে বিনিয়োগকারীরা খুবই বিভ্রান্ত। যে ব্যাংকের শেয়ার দর ২০১১ সালের প্রথম দিকে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা ছিল এখন সে শেয়ারের দর ১৮ থেকে ২০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খাতের কোম্পানির অবস্থা আরো করুণ। এসব কোম্পানির অধিকাংশ শেয়ার বিনিয়োগকারীর কাছে বোঝা হয়ে থাকলেও পড়ন্ত বাজারে এসইসির এত বেশি নতুন কোম্পানি এক সঙ্গে নিয়ে আসা খুবই হতাশাব্যঞ্জক বলে তারা মন্তব্য করেন।