আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে প্রতিশোধ বা কাউকে হেনস্তা করার জন্য বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘আমি অতীতেও বলেছি এবং এখনও পরিস্কারভাবে বলছি বাংলাদেশেযুদ্ধাপরাধী হিসাবে তাদেরই বিচার করা হচ্ছে-যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। এটা কোন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা অন্যকোন উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে না।’
মন্ত্রী আজ সিরডাপ মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত দু’দিনব্যাপী এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার মত অপরাধ সংঘটিত করেছিল তা দেশীয় আইনে যেমন অপরাধ তেমনি আন্তর্জাতিক আইনেও সমানভাবে অপরাধ। তাই অভিযুক্ত এসব যুদ্ধপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে সরকারের অন্যকোন উদ্দেশ্য নেই।
বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম।
দীর্ঘদিন পরে কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে-এ ধরনের অভিযোগের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নির্মম হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘদিন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় থাকার ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রায় ১১ হাজার আসামী জেলখানায় আটক ছিল কিন্তু ৭৫-এর পট-পরিবর্তনের পর এসব আসামীদের জেল থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়।
দীর্ঘ ৪০ বছর পরে হলেও এই বিচার হওয়া উচিত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই বিচারকার্যে বিভিন্ন দেশ ও বিদেশী সংস্থা আমাদের সহযোগিতা করছে। দীর্ঘ ৪০ বছর পরে হলেও এই বিচার হওয়া উচিত। কারণ তা না হলে যারা অন্যায় করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার সংস্কৃতি থেকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব না।
বিচারে অযথা কালক্ষেপণ করা হচ্ছে এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের ট্রাইবুনাল ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য তাই আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বিচার প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য যতটুকু সময় নেয়া দরকার আইনসঙ্গতভাবেই তা করা হচ্ছে।
বিচারকার্যকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসাবে আখ্যায়িত করে আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৭১’র মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা ঘটিয়েছিল তাদের বিচার করা হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই আমাদের জাতির কলঙ্কমোচনে এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা কঠিন, সময়-সাপেক্ষ ও দুরূহ হলেও অসম্ভভ নয়।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ গোলটেবিল বৈঠকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরেল ফেচারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করেন।